30 August 2013

যুবতী মেয়েটা

(১)
একটু ভ্যাতলা ভ্যাতলা মিষ্টি কথা, জন্মতারিখ জানা, আকাইম্মা বিষয় নিয়া আজাইরা প্যাচাল পাড়তে পারা আর ফাস্টফুডের দোকানের বিলটা দিতে পারলেই প্রেমিক হওয়া যায়। পটায়া পটায়া বহুত আকাম করা যায়। চুলগুলা না আঁচড়ালে, একটু 'ক্যাজুয়াল লুক' নিতে পারলে তো পোয়াবারো।

আধযুগ ধরে প্রেম করা পোলারে তাদের বিয়া কবে হবে তা জিজ্ঞাসা করলে কয়, 'মামা অনেক দায়িত্ব মামা। এখন আমি রেডি না, বাসাতেও রেডি না। বিয়ে করলে তো লাইফ পুরা বদলায়া যাবে।'......

বিয়ের প্ল্যান নাই কিন্তু তারা ঠিকই বছর ধইরা রেগুলার ফেসবুকের কমেন্টে কোলন স্টার মেরে কমেন্টিং করে। এই রোমান্সে রোমাঞ্চিত বন্ধুরা তাতে লাইকায়। ঢাকায় রেস্টুরেন্টে বসে, রিকসার হুড তুলে প্রেম করে। ওয়াহ ওয়াহ!! এসব ড্যূড আর চিক্সদের কাছ থেকে নতুন নতুন ঐশী সিরিজের কাহিনী সৃষ্টির অপেক্ষা কেবল... মুক্তি কই?

(২)

"ছেলের বয়স মাত্র ২৭। এখনই কীসের বিয়ে?" -- আহাহা! মাত্র সাতাশ বছর। ছেলে তো শিশুই। আজকাল তো ছেলেরা বড় থাকে যখন তার বয়স ১৭। ক্লাস ইলেভেন-টুয়েলভে পড়ে, তখন তারা বড় থাকে, ফুটপাতে, রিকসায়, পার্কে কলেজ ড্রেসপরা মেয়েদের সাথে শরীরের উত্তাপ ভাগাভাগি করে। যে ছেলে এইসব দেখে টেখে আরো ১০ বছর পার করে ফেলসে, সে শিশু না তো কী? সে তো বড়ই হয় নাই। হইলে কি আর এই দশা হইত? এই সমাজ অনেক অনেক শিশুতে ভরে থাকুক।

এখনকার সময়ের প্রবাদ তাই বদলে গেছে :

If money is lost, everything is lost,
If health is lost, something is lost.
IF CHARACTER IS LOST, NOTHING IS LOST.

(৩)

বোন, সেজেগুজে একটা ছেলের চোখের দৃষ্টি পাওয়া কিন্তু নিজেকে অপমান করা। একটা ছেলে চোখ দিয়ে শরীরটাকে স্ক্যান করতে থাকে, টের তো পাও, তাইনা? অসভ্য সমাজে তোমার আপন ভাইও হয়ত কারো শরীরের দিকে এভাবেই তাকায়। তাই বলে পুরুষরা খারাপ বলে গালি দেবে? ভালো ছেলেও কিন্তু অনেক।

কিছু মেয়ে যেমন শরীরটাকে অন্যের কাছে তুলে ধরে কারো কারো ফ্লার্টিং পাওয়ার আশায়, অমন ছেলেরাও ওটাকেই ভালোবাসে। তাই সেই অভ্যাসের বশেই ভালো মেয়েদেরকেও চোখের শিকার বানায়। এখন তারা যেমন নোংরা, আখিরাতেও এই নোংরাদের আল্লাহ আলাদা করেই পাকড়াও করবেন।

বোন, তুমি সংযত হও। আল্লাহকে ভয় করো। এই শরীরটাকে জাহান্নামের আগুণের কারণ করিয়ো না বোন। আমি তোমাদের কাছে অনুরোধ করি, আল্লাহকে স্মরণ করো, শরীরকে আবৃত রাখো। তোমার ওই কমনীয় চামড়া এখন হয়ত পুরুষের চোখ ঝলসে দিচ্ছে, একসময় আগুণ এসে তা ঝলসে দিবে এমন যেন না হয়।

26 August 2013

বৃষ্টির দিনে আমার রোমান্টিকতা

বৃষ্টি হচ্ছে, ধুম-ধাড়াক্কা বৃষ্টিতে আর হড়মড় করে বাজ পড়তেসে। ভয়াবহ ভালোলাগা। বয়ঃসন্ধিকাল থেকে বৃষ্টিতে গালে হাত দিয়া তাকায়া থাকতাম, ঠাকুরের কবিতা চলত মাথায় -- 'এমন দিনে তারে বলা যায়'। শিশুসুলভ ব্রেইন রয়ে গেলে এখনো ওই টাইপের স্ট্যাটাস মারতাম হয়ত - 'বেনু বনে বায়ু নাড়ে এলোকেশ, মন যেন চায় কারে।' (জসীমউদ্দিন)

এখন বালখিল্যতা একদম নাই ভিতরে। বৃষ্টিতে লক্ষ লক্ষ কবর ভিজে যায়। তাদের মাটি সিক্ত হয় এই পানিতে। এই বৃষ্টিবিলাসে আমার ভবিষ্যত ঠিকানার কথাও মনে পড়ে। অন্যায়কারীদের হাতে মরে যাওয়া সন্তানের মায়ের চোখের পানির সাথে মিশে যায় এই বৃষ্টি। এই বৃষ্টিতে খেতে না পাওয়া মানুষরা ভিজে রাস্তায়, একচিলতে ছাদের নিচের আশ্রয় না পাওয়া যন্ত্রণাদগ্ধ হৃদয়গুলো পথের ধারে বসে ভিজায় তাদের শরীর।

এমন সময়ে এই পৃথিবীতে বাস করা মানুষদের মাঝে বৃষ্টি নিয়ে সম্পূর্ণ বৃষ্টিবিলাস কেবল সুবিধাভোগী, বাস্তবতাবিবর্জিত মানুষদের পক্ষেই সম্ভব।

বৃষ্টি হৃদয়কে সিক্ত করে, সেই হৃদয় যদি আলোকিত হয়, সে জানে -- এই জলধারা ঝরার সময়ে দু'আ কবুল করার একটা সময় আছে। সেই সুবিধা ধনী-গরীব, একাকী-দোকলা, মজলুম-রোগী সবার জন্য সমান। এই অধিকার আর অনুভবটাই সঠিক, রোমান্টিসিজমের অনুভব সঠিক না।

24 August 2013

প্রিয়তমার কাছে চিঠি

ইদানিং তোমাকে প্রায়ই মনে পড়ে। তুমিও কি আমার মতন এমন অজস্র তিক্ত মূহুর্ত কাটাচ্ছ? তুমিও কি প্রায়ই সমাজের নোংরামিতে অসহায় হয়ে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে থাকো? যখন বন্ধুরা তাদের বউদের নিয়ে/গার্লফ্রেন্ডদের হাজির করে আড্ডায়, দেখানোর আগ্রহটা থাকে প্রকট। এই প্রদর্শনেচ্ছা বুঝতে অন্তর্যামী হতে হয়না, একটু বুদ্ধি থাকলেই হয়। অফিসের কলিগ, কলেজ ও ভার্সিটির বন্ধুদের আড্ডাতে ওই মেয়েগুলো যখন অমন করে -- ওদের নিজেদেরই কি খুব স্বস্তি হয়? আমার আসলে তা মনে হয় না। আমি তাই কোনদিন যেচে পড়ে কারো সাথে আলাপ করতে বা পরিচিত হতেও যাইনি।

আমি তোমাকে এমন পুতুল বানিয়ে প্রদর্শনে বিশ্বাসী নই। তুমি আমার কাছে এত ঠুনকো নও যার মূল্য আমি পরের চোখে বুঝতে যাব। দু'জন মানুষ একসাথে যেন অনন্তকাল পাড়ি দিতে পারি তাই অনন্তের মালিকের কাছে প্রিয় আর পছন্দের হওয়াই তো আমার হৃদয়ের আজন্ম প্রত্যাশা।

'একটা এমন সঙ্গী দরকার যাকে নিয়ে ঘোরা যাবে' -- এমন মানসিকতা নিয়ে সবাই আজকাল বড়শি ফেলতে থাকে কলেজ জীবন থেকেই। পিচ্চি পিচ্চি ছেলেগুলোও সাময়িক মাস্তির লক্ষ্যে কত কিছুই না করে। এই সমাজের বন্ধনগুলো কোথায় যাচ্ছে বল তো? আমার বড্ড খারাপ লাগে। এই ছেলেমেয়েগুলোর হৃদয় সারাক্ষণ অস্থির থাকে, জ্বালাপোড়া থাকে। ভালোলাগাগুলো শরীরের ভালোলাগা, তাতে সাকীনাহ থাকে না, তাতে ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে মুখ ভেজানোর অনুভূতি থাকে না।

জানিনা তুমি কোথায় আছ। খুব স্বস্তিতে নেই জানি। এমন উত্তাল অস্থির সংস্কৃতি আর কামাসক্তদের প্রচারণার সমাজে সচ্চরিত্রা নারীর চলাফেরা অনেক কঠিনই বটে। তোমার জন্য আমি তেমন কিছু করতেও পারছি না। তবে বিশ্বাস করো বোকা মেয়ে, তোমার জন্য দু'আ আমার থাকে প্রতিদিন অনেক বার করে প্রতিবেলায়। যদি বেঁচে থাকতে আল্লাহ আমাদের দেখা না-ও করান, জান্নাতের বাগানে দেখা হবে ইনশা আল্লাহ। তোমার কথা ভাবলেই আমার স্বপ্ন জাগে এমন মূহুর্তের যেখানে স্বচ্ছ পানির এক নদীর পাশে দু'জনা বসে আছি। জান্নাতের বর্ণনায় এমন চাওয়াই আমার বুকে জাগে। নিজের যত্ন নিয়ো, তোমার প্রতিদিনের দু'আতে আমাকে সঙ্গী করিয়ো।

ইতি, তোমার প্রিয়।