30 March 2014

পর্নোগ্রাফি, কামসূত্র আর বিকৃত যৌনাচার যেভাবে পরিবারগুলোকে ধ্বংস করছে

​​
​​
​পশ্চিমা ইন্টেলেকচুয়ালরা এই সমাজটাকে "হাইপার সেক্সুয়ালাইজড" সমাজ হিসেবে বলে থাকেন। চিন্তা করে দেখুন, টুয়েন্টি-টুয়েন্টি খেলা দেখতে বসলেন, তাতে কমার্শিয়াল দেখছেন মোবাইল হ্যান্ডসেটের, তাতেও নারী-পুরুষ চুম্বনদৃশ্য। আপনি যদি টেলিভিশন থেকে দূরেও থাকেন, বিলবোর্ডে, পোস্টারে, ফেসবুকের অ্যাডগুলোতে আপনি যথেষ্টই যৌনতা দেখতে পাবেন। পুরুষ-নারীর কামকে জাগিয়ে এসব পণ্য ক্রয় বিক্রয় হয়। পশ্চিম নিয়ন্ত্রিত বিকৃত সংস্কৃতি ও ভারতের নির্লজ্জ-অশ্লীল সংস্কৃতি প্রভাবিত বাংলাদেশীও সংস্কৃতিও এখন বিকৃত, অসুস্থ হয়ে উঠেছে।

পশ্চিমারা নারীদেরকে ভোগ্যপণ্য হিসেবে তুলে এনেছিলো অনেক আগেই। যদিও গত কয়েক শতাব্দী আগেও যে যৌনতার বিষয়গুলো এতটা প্রকট ছিলো না তা আমাদের স্বাভাবিক জ্ঞান ও চোখেই আমরা জানি। নারীর মাঝে জাগিয়ে তুলেছে এমন চিন্তা যে টিকে থাকতে হলে পুরুষের কাছে শারীরিকভাবে আকর্ষণীয় হতেই হবে... তারাও সেই চেষ্টা করেছে উন্মাদের মতন। পুরুষের কাছে তুচ্ছ হয়ে গেছে নারীর শারীরিক সৌন্দর্য। ফলে, সেই পুরুষ-নারীদের কাছে ব্যক্তি জীবনে, বিবাহিত জীবনের স্বাভাবিক শারীরিক আনন্দগুলো আর সাধারণ লাগে না। তখন তারা কুরুচিপূর্ণ উপায় বের করে যৌনতাকে মেটাতে চায়। শরীরের যাবতীয় অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে ব্যবহার করেও তাদের খায়েশ মেটে না। তারা পর্নোগ্রাফিতে এইসব বিকৃত যৌনাচারকে সহজ করে আনতে চায়, কেননা স্বাভাবিক কোন কিছুই তাদের কাছে আর স্বাভাবিক নেই। যে শারীরিক বিষয়গুলো মানুষকে তৃপ্তি দেয়ার কথা, সেগুলোই তাদেরকে নিকৃষ্ট বিকৃত জন্তুতে পরিণত করে। শেষ পর্যন্ত তারা নারী-পুরুষ ছেড়ে সমলিঙ্গে আনন্দ খুঁজে, পশুদেরকেও ছাড়ে না (আস্তাগফিরুল্লাহ)

এসব সমাজ থেকে মুসলিম সমাজের মাঝে অনেক ধারণা যেভাবেই হোক চলে এসেছে; ফলে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মাঝে কিছু বিষয় জায়েজ/নাজায়েজ কিনা এমন প্রশ্ন মুসলিম স্কলারদেরকে অবাক করে দেয়। বছরের পর বছর ধরে কামসূত্র পাঠ, পর্নোগ্রাফিক গল্প, চটি গল্প পড়তে ওয়েবসাইটে ঢুঁ দেয়া, পর্নোগ্রাফিক মুভিতে বিকৃত ভঙ্গিমায় ও বিকৃত নিষিদ্ধ উপায়ে কামপ্রবৃত্তি চরিতার্থ করার দেখে দেখে পুরুষগুলোর মনে (ইদানিং নারীদেরও) গেঁথে যায়। সরলমনা স্ত্রীরা তাদের স্বামীর পাশবিক আচরণ টের পান বিয়ের পরে অন্তরঙ্গতায় এসে। সমাজে অজস্র পরিবারে সুখ পালিয়েছে, অনেক নারী নীরবে কেঁদেছেন, কাঁদছেন। পর্নোগ্রাফিতে আসক্তি সেসব পুরুষদের মস্তিষ্কে ও চিন্তায় স্থায়ী বিকৃতি এনেছে। কী ভীতিকর! এইসব মানুষদের চিকিতসা প্রয়োজন তা সাইকোলজিস্টরা বলে থাকেন। ধীরে ধীরে থেরাপির মাধ্যমে এই নেশা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। কিন্তু তাতে আন্তরিক প্রচেষ্টা প্রয়োজন। তাওবাহ করা প্রয়োজন। তাছাড়া ইসলাম সবকিছুতেই কোমলতা, লজ্জাশীলতা, হায়া শেখায়। সেটা অন্তরঙ্গ সম্পর্কতে গিয়ে পশুদের মতন বল্গাহীন হওয়াটা রুচিবিকৃতির পরিচায়ক, যা পরকালে ভয়াবহ পরিণতির সম্ভাবনা ধারণ করে।

পর্নগ্রাফি এখনকার ছেলেমেয়েদের কাছে ডালভাত হয়ে যাচ্ছে, যা বিশাল গুনাহ। পর্নোগ্রাফি থেকে শেখা বিকৃত যৌনাচার যখন পারিবারিক জীবনে প্রয়োগ করতে যায় তখন সেটা আরেকধাপ এগিয়ে যায়। এই ধরণের মানুষ কখনো সন্তুষ্ট হয় না। পর্নগ্রাফির নেশা তাদের শারীরিক তৃপ্তিকে নষ্ট করে ফেলে। অথচ মুসলিম পুরুষ বা নারী নিজেদেরকে নতদৃষ্টিতে, সংযত আবেগে চলার পরে বিবাহিত জীবনে পরস্পরের মাঝে সুন্দর উপায়েই আনন্দ খুঁজে পাওয়ার তথা ছিলো। স্বামী-স্ত্রীর স্বাভাবিক অন্তরঙ্গতাই তাদের পূর্ণ আনন্দের বিষয় হবার কথা ছিলো। আজকাল ছেলে মেয়েরা অন্তরঙ্গ জীবন সম্পর্কে শিখতে যায় 'কামসূত্র' থেকে, যা অশ্লীলতা আর নগ্নতার চুড়ান্ত বিষয়। স্কলারদের অনেকেই বলেন দাম্পত্য জীবনের প্রয়োজনীয়টুকু মানুষ আপনাআপনি শিখে যায়। তবে, ইসলামে অন্তরঙ্গতায় কতটুকু অনুমুতি আছে, কতটুকু নিষেধ --এগুলো সময়মতন জেনে নেয়া উচিত। ব্যাস! মনে রাখা উচিত, আল্লাহ কোমলচিত্ত, লজ্জাশীল ও পবিত্র মানুষদের পছন্দ করেন।

কেন এই কথা বলছি? দেখুন ভাই, আপনি একজন মানুষ। আল্লাহ মানুষকে কিছু শারীরিক, মানসিক যোগ্যতা দিয়ে পাঠিয়েছেন। ইসলাম আমাদেরকে সেগুলোর নিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের জন্য বলেছে। আমাদের উদ্দেশ্য অনেক অনেক উঁচু, অনেক বিশাল, তাতে আছে শুধু মানুষ না, এই গোটা প্রাণীকূলের, পরিবেশকেও যথাযথ রাখার দায়িত্ব। আমাদের মন-হৃদয় আর চিন্তাগুলোই হবার কথা অনেক বিশাল। সেখানে আমাদের যুবসমাজও যেন যৌনতাকেন্দ্রিক অদ্ভুত বিচিত্র কিছু জান্তব চিন্তা নিয়ে বেড়ে উঠছে...  আল্লাহ আমাদের মুসলিম সমাজকে নগ্নতা-অশ্লীলতা-বেহায়াপনা-বিকৃতকাম-অবৈধ যৌনাচারের হাত থেকে রক্ষা করুন। আল্লাহ আমাদেরকে এমনভাবে চলার তাওফিক দিন যেন আমরা দুনিয়ায় শান্তি ও আখিরাতে মুক্তি পেতে পারি।

29 March 2014

আপনি কি চান আপনার বিয়েটা হোক পবিত্রতার স্পর্শমাখা?

​​কখনো ভেবে দেখেছেন আপনার স্ত্রীকে/স্বামীকে আপনি যেদিন বলবেন, "তুমি আমার জীবনের অনেক অপেক্ষার ফসল। তোমার সাথে মনের কথাগুলো বলব বলে সাজিয়ে রেখেছি অনেকগুলো বছর ধরে..."

আপনি কি জানেন বিবাহিত জীবনের কত বড় আত্মবিশ্বাস আপনাদের এই অন্তর ও শরীরের পবিত্রতাটুকু? যারা সৎ, তাদের আত্মবিশ্বাস দেখেছেন? তারা জানেন তাদের অর্জনটুকু কষ্টসাধ্য। তখন প্রিয়জনেরা তাদের প্রতি এমনিতেই অনেক বেশি আকর্ষণ অনুভব করেন। তারা জানেন, এই মানুষটাকে বিশ্বাস করা যায়, এই মানুষটার প্রতি নির্ভর করা যায়।

যাদেরকে টেলিভিশনে দেখেন, পত্রিকায় দেখেন পণ্যের পাশের রূপ বেচতে, যারা ফেসবুকে ছবি আপলোড করে লোকের সস্তা কমেন্ট পেতে আনন্দবোধ করে -- তারা নিজেরাও নিজেদেরকে সস্তা করে ফেলে। নিজেকে তাদের তলে নিয়েন না, দূরে থাকুন।

আপনি আল্লাহর এক অমূল্য সম্পদ। ভুল করলে তাওবা করুন, আল্লাহকে বলুন তিনি যেন আপনাকে সাহায্য করেন শরীর ও মনের পবিত্রতার জন্য। যদি সৎ চরিত্রের কোন নারী বা পুরুষকে জীবনে চান, নিজেকে শুধরে ফেলুন।

আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাদেরকে কিন্তু অপবিত্র হৃদয়ের মানুষের হাতে তুলে দেন না। আপনি চরিত্র উত্তম না হলে আপনি কখনই এমন মানুষকে জীবনে পাবেন না যে আপনার চক্ষুশীতলতাকারী জীবনসঙ্গী হবেন। জীবন কিন্তু অনেক বড়। বিয়ে আপনার জীবনের অনেক বড় একটা ঘটনা। সবাইকে ফাঁকি দিতে পারলেও আল্লাহকে পারবেন না কিন্তু...

চারিত্রিক স্বচ্ছতা দিয়ে আপনার স্বামী/স্ত্রীর কাছে আপনি যতটা প্রিয়/বিশ্বাসভাজন/অমূল্য হতে পারবেন-- লাখ লাখ টাকার বাড়ি-গাড়ি-গহনা দিয়েও তাকে মুগ্ধ করতে পারবেন না চরিত্রে আর নিয়াতে সমস্যা থাকলে। মনে রাখবেন, খারাপ লোকেরাও সৎ লোকের মূল্য বুঝে।

27 March 2014

ভাইয়া, পথে ঘাটে সুন্দরী-রূপসী নারীদের দেখে আকর্ষণ হয়, তাইনা?

​​আচ্ছা ভাইয়া, আসুন একটুখানি কথা বলি। পথে ঘাটে সুন্দরী-রূপসী নারীদের দেখে আকর্ষণ হয়, তাইনা? আপনি অবিবাহিত, ঠিক দ্রুত তেমন সম্ভাবনাও নেই বিয়ে হবার, তাই মন আরো উদাস হয়? পথে/স্কুলে/কলেজে/ভার্সিটিতে/ক্লাসরুমে আকর্ষণীয়া মেয়েদের দেখে বুকে দীর্ঘশ্বাস হয়? আশেপাশে সবাই যখন জোড়া বেঁধে ঘুরে, ফোনে ইটিশ-পিটিশ করে তখন নিজেকে একলা একলা লাগে?

জানেন তো, যে জিনিস সহজে পাওয়া যায়, তার ফলাফল কেমন হয়? 'সস্তার তিন অবস্থা' পড়েননি? যে মেয়েটাকে সহজেই আপনি পাবেন, সে কিন্তু আপনার হাত থেকেও *সহজেই* অন্য কারো হাতে চলে যাবে। যে মেয়েটার সৌন্দর্য আপনি দেখতে পাচ্ছেন, দেখে মুগ্ধও হচ্ছেন, সে তার সৌন্দর্য আরো অনেক লোকের কাছেই দেখিয়ে বেড়াবে। মানুষ এমনই, তাকে জোর করে বদলানো যায় না, চাপ প্রয়োগে মানুষ আরো বেশি প্রতিক্রিয়াশীল হয়। এই প্রক্রিয়াতেও আপনি তাকে 'ঠিক' করতে পারবেন না।

কী পারবেন জানেন? নিজেকে ঠিক করতে। আল্লাহকে ভয় করার সুযোগ আছে, তাওবা করলে তিনি মাফ করবেন আপনাকে। বিনিময়ে অল্প কয়েকদিনের দুনিয়াতে তো শান্তি আছেই, আখিরাতে মুক্তিও আছে।

এই সমাজেই অজস্র বোন আছে, যারা তাদেরকে পবিত্র রেখেছে, যারা তাদের শরীর ও মনকে এমন মানুষের জন্যই রেখে দিয়েছে যে তাদেরকে পূর্ণ অধিকার দিয়ে ঘরের কর্ত্রী করে, জীবনের সঙ্গিনী করে নিয়ে আসবে। আপনি কি এমন দ্বীনদার কোন নারীকে পেতে চান না? আপনি কি চান না আপনার সন্তানের মা এমন কেউ হোক, যিনি পবিত্র চরিত্রের, যিনি সন্তানদেরকেও তার মা ও তার বাবার মতন চরিত্রকে মুগ্ধ হয়ে গ্রহণ করার শিক্ষা দিবেন?

আসুন ভাই, সস্তা না হই, সস্তা এইসব তুচ্ছ/নোংরা/জঘন্য সংস্কৃতিতে হারিয়ে না যাই। নিজেকে যোগ্য করুন, দেখবেন আল্লাহ আপনার জন্য কোথা থেকে যে এক অসাধারণ নারীকে হাজির করেছেন যার দ্বীনদারী দেখে আপনি মুগ্ধ হয়ে যাবেন।

আপনার কিন্তু বাজারের সব চকচকে পোশাক দেখে লাভ নেই, যে পোশাক আপনার দেহের সাথে সাইজে ভালো হয়, ফিটিং হয়-- সেটাই আপনি কিনে নেন। তেমনি, সস্তা সব পণ্যের মতন নারীদের দিকে ভ্রূক্ষেপ করবেন না, বরং এমন এক মানুষের জন্যই অপেক্ষা করুন যে আপনার জীবনের জন্য, আপনার পারিবারিক জীবনের জন্য অসাধারণ হবে, আপনারা দু'জনে মিলে জান্নাতে যাওয়ার পথে জ্ঞানার্জন ও আমল করতে পারবেন।

24 March 2014

যদি মনে করেন বিয়ের আগে প্রস্তুতি দরকার নেই তবে যেসব ক্ষতি হতে পারে

​​
​​​বিয়ের আগে সত্যিই অনেক প্রস্তুতি দরকার। যারা মনে করেন প্রস্তুতি ছাড়াই বিয়ে করলে সমস্যা নেই,তারা এখনকার সময়ে চারিদিকে দাম্পত্য কলহ এবং বিবাহবিচ্ছেদের পরিমাণ দেখলেই বুঝতে পারবেন মানুষে মানুষে অমিলগুলো এখন সংসারে সহাবস্থানে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াচ্ছে। যাই হোক, বিয়ের মূল প্রস্তুতিটা মানসিক, তবে এর সাথে আরো অনেক কিছুই চলে আসে। আপনাকে ফোকাসড হতে হবে। আবেগ থেকে বের হয়ে আসতে হবে। আপনাকে নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে, আপনি কি আসলেই আপনার জীবনটা আরেকজনের সাথে শেয়ার করতে প্রস্তুত?

বিয়েতে যদি মনে করেন আরেকজন কেবল আপনাকে 'সার্ভিস' দিবে, তাহলে আপনি সম্পূর্ণ ভুলের উপরে আছেন যা আপনাকে অশান্তি এনে দিবে নিশ্চিতভাবে। ঠিক  উল্টোটা যদি হয়, আপনি যদি আরেকজনকে কী কী 'কর্তব্য' পালন করে দিবেন তা চিন্তা করেন, এবং সেই কর্তব্য সম্পর্কে ভাবতে ভাবতে যখন নিজের অভ্যাসগুলো নিয়ে ভাবতে পারবেন -- তখন আপনি কিছুটা বুঝতে পারবেন আপনার এখনকার আপনি মানুষটার সীমাবদ্ধতাটুকু। এই চিন্তাটুকু করে যদি তেমন কিছুই বের করতে না পারেন, নিশ্চিত থাকুন আপনি এখনও তেমন কিছুই বুঝেননি আপনার দায়িত্ব ও কর্তব্য নিয়ে।

বিয়ের মাঝে আল্লাহ অনেক প্রশান্তি, আনন্দ ও দয়া রেখেছেন। কিন্তু একজন মানুষ কিন্তু মূলত দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে সংসার শুরু করে। একজন পুরুষ যখন বিয়ে করে, তখন সে তার স্ত্রী হওয়া নারীটির বাকি জীবনের সম্পূর্ণটার ভরণপোষণের দায়িত্ব নিয়ে নেয়। চিন্তা করে দেখেছেন তো আপনি কত বিশাল দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন? একইভাবে, একজন নারী যখন তার স্বামীর সংসারে যান, তিনি তার স্বামীর সংসারটির কর্ত্রী হয়ে তিনি সেই স্বামীর পরম বন্ধু হয়ে তার দেখাশোনা এবং মা হয়ে তার সংসারের সকল সন্তানদের জন্মদান এবং তাদের বড় করার মতন কিছু বিষয় কাঁধে নিয়ে ফেলেন। বিয়ের মূহুর্তটির পর থেকে এই ধাপগুলোসহ আরো অজস্র বিষয় অবধারিতভাবেই একজন পুরুষ বা নারীর কাঁধে চেপে বসে।

তাই, বিয়ে নিঃসন্দেহে অবহেলা বা হালকা করে নেয়ার বিষয় নয়। আপনার জীবনের সম্ভাব্য সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্তগুলোর একটি এই বিয়ে। সুতরাং, বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে আবেগের চেয়ে একটু মাথা ঠান্ডা করে নিজের যোগ্যতা নিয়ে ভাবুন। নিঃসন্দেহে আল্লাহ আপনাকে অনেক গুণ দিয়েছেন এবং অবশ্যই আপনি আরো কিছু সীমাবদ্ধতা নিয়ে আছেন। কী করলে আপনি নিজেকে উন্নত করতে পারবেন, কীভাবে সেই সংসার জীবনে শান্তি আনতে পারবেন সেই চিন্তা করে কাজ করতে থাকুন।

তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, বিয়ে করবেন যাকে, তার কিছু স্বভাব এবং আচার-আচরণ আছে, যা আপনার চেয়ে ভিন্ন হবে। তার কথাবার্তার বিষয় এবং ভালোলাগার বিষয়েও প্রচুর অমিল থাকবেই। তার পরিবার থাকবে, সেই পরিবারের প্রতি তার প্রচুর কর্তব্য থাকবে, আবেগ এবং জটিলতা থাকবে। যেই আপনি কথাবার্তা ভিন্ন হওয়ার কারণে অনেক বন্ধুদেরকে এড়িয়ে চলেছেন, সেই আপনি কি প্রায় পুরো অচেনা মানুষটির গোটা জীবনটাকে আপনি মেনে নিয়ে সম্ভাব্য কর্তব্যটুকু করতে মানসিকভাবে প্রস্তুত তো?

এই প্রস্তুতিগুলো না থাকলে দেখা যাবে আপনি হয়ত এমন কিছু আচরণ করে বসবেন যাতে আপনার সেই স্বামী বা স্ত্রী আঘাতপ্রাপ্ত হবেন। তার সেই প্রতিক্রিয়া থেকেই হতে পারে আপনার সংসারের অশান্তির শুরু। তাই ((যদি বিয়ে করতেই চান)) ব্যক্তিগত চরিত্র, চিন্তার ধরণ, সহিষ্ণুতা, সহমর্মীতা, সচেতনতা, পরোপকারিতা, দায়িত্ববোধ নামক গুণগুলো যথাসম্ভব অর্জনে নিজেকে নিয়োজিত রাখুন!!

আল্লাহ আমাদেরকে এমন পরিস্থিতিতে ফেলে দেন না যা আমাদের সমাধানের অতীত। এই বিষয়গুলোও অসম্ভব নয়। তবে, যদি কল্যাণ চান, যদি সুন্দর একটি দাম্পত্য জীবন আশা করেন, যদি সুখী পরিবার কামনা করেন তাহলে আপনাকে অবশ্যই এইসব কিছু বিষয়ে সচেতন হওয়া জরুরি। একটুখানি ভাবুন, নিজেকে নিয়ে কাজ করুন, প্রস্তুত হোন -- ইনশা আল্লাহ আপনি কল্যাণপ্রাপ্ত হবেন।

সবচেয়ে বড় কথা, আমরা কিছুই করতে পারিনা যদি আল্লাহ সাহায্য না করেন, যদি আল্লাহ কবুল না করেন। তাই, আল্লাহর কাছে খুব বেশি করে দোয়া করুন। দোয়া একটি ইবাদাত, দোয়া ঈমানদারদের জন্য এক অব্যর্থ অস্ত্র যা অসম্ভবকে সম্ভব করে দেয়। সুবহানাল্লাহ! আল্লাহ আমাদের উত্তম স্বামী/স্ত্রী হবার এবং পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আল্লাহ আমাদেরকে সুন্দর একটি সমাজ গঠনের তাওফিক দান করুন।

19 March 2014

বিয়ের পরে দেখা গেলো মেয়ে পুরাই অন্যরকম!

​- ভাই, বিয়ে করবেন শুনতেছি...

- হুমম।

- ভাই, আপনার ভয় লাগে না? আপনি যেমন চাইসেন, মেয়ে যদি তার পুরা উলটা হয়...

- ভয় দেখাইতে চাচ্ছ?

- না। বলতেসি আরকি। অনেক মানুষই নাকি যা দেখে বিয়ে করে, পরে নাকি দেখে অন্যরকম।

- আমি কি নিজের উপরে ভরসা করে স্ত্রী খুঁজবো?

- ভরসা আল্লাহর উপরে কে না করে?

- হয়ত সবাই করে। কিন্তু তোমার অন্তরের খবর তুমিই জানবা।

- ঠিকাছে ভাই, বুঝায় বলেন কেমনে আত্মবিশ্বাস পাইতেসেন।

- দেখো ভাই, সূরা ফুরকানে শেখা সেই দোয়াটা (রাব্বানা হাবলানা মিন আযওয়াযিনা ওয়া যুররিইয়্যাতিনা কুররাতা আ'ইয়ুনিন ওয়া জা'আলনা লিল মুত্তাকি'না ইমামা) আমি নিয়মিত পড়ি আর অন্তরেও অনুভব করি। অর্থাৎ,আমি একটা "কুররাতুল আ'ইন" আমার জীবনসঙ্গী চাই। এর মানে কিন্তু এমন না সুন্দরী, রূপসী, বংশীয়া, ডিগ্রিধারী...  এর মানে এমন কিছু যে মানুষটার উপস্থিতি আমার চোখ শীতল করবে, অন্তরকে শান্তিতে ভরিয়ে দিবে। আর আমিও তার যোগ্য হতে নিজেকে "'মুত্তাকিনদের ইমামদের অন্তর্ভুক্ত" করে নিতে আল্লাহর কাছে দোয়া করছি একই দোয়ায়। ছোটখাটো কীসের মাঝে আল্লাহ শান্তি মিলিয়ে দিবেন, সেইসবের মালিক তো আমি না। অন্তরের মালিক তিনি। দুনিয়ার সকল সম্পদের মালিকও তিনি।

- ভাই, আপনার চেনাজানা তো কেউ নাই, এমন মেয়ে তাহলে কোথা থেকে পাবেন?

- আল্লাহর কাছে দোয়া করতেসি। দোয়া কেন বিফলে যাবে? এটা কোনদিন হতে পারে না। আমি কী করেছি, কী ভাবছি সবই আল্লাহ জানেন। আমার দায়িত্ব আমি তার হাতেই তুলে দিয়েছি, তিনিই আমার উত্তম অভিভাবক। আমি আমার কাজটুকু করবো। দেখার সময় দ্বীনদার মেয়ে খুঁজবো।  ইনশা আল্লাহ এটা ব্যাপার হবে না। আল্লাহর উপরে ভরসা করে সামর্থ্য অনুযায়ী কাজ করলে কখনো কেউ বিফল হয় না।

- জাযাকাল্লাহ খাইর ভাই। অনেক কিছু শিখলাম। সাহস পেলাম।

12 March 2014

হারাম প্রেম বনাম হালাল বিয়ে

যারা হারাম সম্পর্ক (প্রেম) করে, তাদের মাঝে সারাক্ষণ একটা চোর-চোর ভাব থাকে। তারা অচেনা ছেলের/মেয়ের সাথে আজেবাজে সময়ে বেড়ায়, রিকসায় চড়ে যা-তা করে, ফাস্টফুডে ঢুকে লুকিয়ে থাকে, ফোনে আরো অনেকের সাথে আলাপ করে। কেউ সন্দেহ করে কিছু বললেই তাদের টেনশন হয়। প্রেমিক বা প্রেমিকার নামে কেউ কুৎসা বললে তাদের বিশ্বাস হয়ে যায় কেননা তারা নিজেরাই তো একটা অন্যায় ও অশ্লীল আচরণ করছে। এভাবে সন্দেহ আর অশান্তি তাদের মনে গেঁড়ে যায় একদম। প্রেম যারা করে তাদের চরিত্রে তাই অস্থিরতা বেশি হয়, দৃঢ়তার অভাব হয়।

যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় বিয়ে করে, তারা জানে প্রিয় মানুষটা সমস্ত দুনিয়ার ফিতনা থেকে বেঁচে থাকে, তার কাছে ফিরে তার সমস্ত আবেগ ভাগাভাগি করতে। তাদের প্রতিটি বাক্য আর খুনসুঁটি তাদের আত্মবিশ্বাস জাগায়। তাদের দু'জনার উপস্থিতিতে আনন্দ ভাগ করে নেয়ার সময়গুলোতে তারা জানে, এই মূহুর্তগুলো ইবাদাতের সমতূল্য কেননা তারা অন্যায় সমস্ত পথ থেকে দূরে থেকে আল্লাহর হালাল করে দেয়া উপায়ে আনন্দ উপভোগ করছেন...

তাই, বিবাহপূর্ব প্রেমকে না বলুন। প্রেম থেকে দূরে থাকুন। নিজের চরিত্রকে সংরক্ষণ করুন। আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় বিয়ে করার চেষ্টা করুন। যদি বিয়ের সম্ভাবনা দেখতে না পান খুব শীঘ্রই, তবে রোজা রাখুন এবং আল্লাহর কাছে প্রচুর দোয়া করুন।আল্লাহ একদিন আপনার জন্য পথ খুলে দেবেন ইনশা আল্লাহ, সহজ করে দিবেন আপনার পথ। নিশ্চয়ই আল্লাহ যখন চান, তখনই বান্দাকে তার প্রিয় উপহারটি দান করেন। যে আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় কেবলই তার কাছে চায়, আল্লাহ তাকে দান করেন, শ্রেষ্ঠতম উপহারটি তাকে দান করেন। আল্লাহ আমাদের মুসলিম ভাইবোনদের রহম করুন।

8 March 2014

অবস্থানে ছোট মানুষকে সম্মান করা একটা বড় গুণ

অবস্থানে ছোট মানুষকে সম্মান করা একটা বিশাল বড় গুণ। হতে পারে আপনি আপনার সামনে থাকা মানুষটির থেকে উন্নত-- জ্ঞানে, গুণে, সম্পদে, রূপে, বংশমর্যাদায়। কিন্তু প্রতিটি মানুষই একটা প্রাণ, তিনিও আল্লাহর বান্দা, তিনিও হয়ত আপনার মতই চেষ্টা করছেন কষ্ট করে বেঁচে থাকার জীবিকার্জনে আর আল্লাহর পথে এগিয়ে যেতে।

হতে পারে একটা মানুষের সামাজিক অবস্থান তেমন ভালো নয়, অথবা তার বুদ্ধি হয়ত বেশি নয়; কিন্তু তার হৃদয়টাই কিন্তু আল্লাহর কাছে বিবেচ্য বিষয়। আমরা যদি কাউকে অপমান করি, যদি কাউকে ছোট করি, তাহলে তিনি হৃদয়ে কষ্ট পেতে পারেন। কাউকে অকারণ আঘাত দেয়া থেকে সাবধান হওয়া উচিত আমাদের...

ধরেন একটা রিকসাওয়ালা কিংবা মজুর, তিনি কাজটা হয়ত বড় কিছু করছেন না, কিন্তু তার একটা আত্মমর্যাদাবোধ আছে। সেই বোধকে আমাদের আহত করা উচিত নয়... একজন মানুষকে সম্মান করবো আমরা যতক্ষণ তিনি কারো ক্ষতি না করছেন, অন্যায় না করছেন। নীতিহীন, অত্যাচারী, খারাপ লোকের প্রতি নিজের ভেতর থেকে ভালো অনুভব করা কিন্তু আবার পথভ্রষ্টতার লক্ষণ...

আমরা যদি মানুষকে রহম না করি, আল্লাহর কাছে কেমন করে রহম পাওয়ার আশা করতে পারি? যারা অন্য আরেকজন মানুষের প্রতি দয়া দেখায়, আল্লাহ তাদের দয়া দেখান। 

আমাদের অন্যদের প্রতি সম্মান ও সহমর্মীতা প্রকাশের গুণটি রপ্ত করার চেষ্টা করা উচিত। আমাদের ব্যক্তিগত আর পারিবারিক জীবন সুন্দর হবে।

​পবিত্রতা কি শুধুই শরীরের?

​পবিত্রতা কি শুধুই শরীরের? আল্লাহর নির্দেশ মানবেন বলে হয়ত কোন নারীকে/পুরুষকে ছুঁয়ে দেখা দূরে থাক, কথাবার্তাও এড়িয়ে গিয়েছেন আপনি... কিন্তু অনলাইনে অর্থাৎ ব্লগে, ফেসবুকে কমেন্টিং, চ্যাটিং করে আপনি যে কথাগুলো বলছেন অচেনা অজানা গাইর মাহরাম পুরুষ/নারীদের সাথে তা কি আপনার মনের পবিত্রতাকে টিকিয়ে রাখছে? প্রশ্নগুলো নিজেকে করুন...

আপনার মনের কিছু আবেগ আছে, কিছু চাওয়া আছে যা হয়ত জমিয়ে রেখেছিলেন ছোটবেলা থেকে, ফেসবুকে এসে তা অনেক ছেলেমেয়ের মাঝে উজাড় করে দিলেন... আপনি কি সেই অনুভূতিগুলোকে আর ফিল করতে পারবেন? তার চেয়ে বড় কথা, মনের পবিত্রতার কথা কি ভেবেছেন কখনো? যে আপনার চোখের সামনে গাইর মাহরাম পুরুষ/নারী বসে থেকে অন্তরঙ্গ আলাপের সাহস করে নাই, সে আপনি অবলীলায় আপনার অনেক ব্যক্তিগত কথা ও আবেগ ভাগাভাগি করছেন এমন কারো সাথে যাকে আপনি একদমই চেনেন না... আপনার স্ত্রী/স্বামী হিসেবে যিনি আসবেন, তিনি কি আপনার এইসব কমেন্টিং/চ্যাটিং পছন্দ করবেন? সবচেয়ে বড় কথা, এই কথাগুলো সবার কাছে প্রকাশিত হওয়াকে কি আপনি পছন্দ করবেন? যদি না করেন, তাহলে কিন্তু তা গুনাহের পর্যায়ে পড়বে। আসুন, ক্ষতির মুখে পড়ার আগেই অনুশোচনা করে সতর্ক হই।

হে আমার মুসলিম ভাই/বোন, একটু সচেতন হোন। আল্লাহর দেয়া নির্দেশগুলো কিন্তু আমাদেরকে হালকা করার জন্য। আমরা ভুল করে অকারণ যুলুম যেন নিজেদের না করি, তাই আমাদেরকে কিছু নির্দেশ ও আদেশ দেয়া রয়েছে। নিঃসন্দেহে তা আমাদের জন্য কল্যাণের। তাই, আসুন আমরা ভুল করে হলেও এমন কাজ না করি যা আমাদের অমূল্য সম্পদ - শরীর ও মনের পবিত্রতাকে নষ্ট করবে... আল্লাহ আমাদেরকে পবিত্র জীবন দান করুন। আমিন।

7 March 2014

অনেকেই সুখী তা তো জানেনই, আর আপনি?

​​
​আপনার জীবনটা আর কারো মতন না। ফেসবুকে প্রচুর বিয়ের পোস্ট দেখে, বিবাহিত ভাই-বোনদের দাম্পত্য সুখের প্রদর্শনী দেখে বিভ্রান্ত হবেন না। সবার জীবনেই অজস্র সমস্যা, কারও সমস্যা লোকে দেখতে পায়, অন্যদেরগুলো পায় না। তাছাড়া সত্যিকারের আনন্দ যাদের হৃদয়ে, তারা কখনো লোককে দেখাতে যায় না, আল্লাহর কাছে শুকরিয়া করে আর লোকের কল্যাণ কামনাতেই তাদের সময় কেটে যায়। মনে রাখবেন, আল্লাহ আপনার যে জীবনটা দিয়েছেন, তার নিয়ামতগুলো, তার জটিলতাগুলো একান্তই আপনার, খুব কম মানুষের জীবনের সাথে তার হুবহু বা অর্ধেক মিল পাবেন। তাই অনুরোধ রইলো, অন্যদের জীবন দেখে, সমস্যা ও তার সমাধান দেখে বিভ্রান্ত হবেন না, সংশয়ে পড়বেন না। আদেশ-উপদেশ-নির্দেশ কেবলমাত্র আল্লাহ ও তার রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছ থেকেই নিতে হয়। আর সেটা নিজ জীবনে প্রয়োগ করতে হয়।

নিশ্চিত থাকুন, আপনার প্রয়োজনীয় কোনকিছুর কিছুমাত্র কম আপনাকে দেয়া হয়নি। আল্লাহর একটিমাত্র নিয়ামাতের বিনিময় আমাদের গোটাজীবন পরিপূর্ণ ঈমানের সাথে পার করলেও হবে না। আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়ার প্রতি সন্দেহ ও অভিমানের দুঃসাহস এলে নিজেকেই বুঝিয়ে শান্ত করুন, নিজেকে কৃতজ্ঞ বান্দা হিসেবে তৈরি করুন। দোয়া করুন, কেননা দোয়া এক অব্যর্থ অস্ত্র, একটি ইবাদাত, দোয়ায় ভাগ্য ফিরায়।

আল্লাহর আদেশ, রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নির্দেশ জানতে পারলে সাথে সাথে মানতে ইচ্ছা করলেও যদি কিছু পথ কঠিন মনে হয় -- সেই আল্লাহর কাছে হাত পেতে কাঁদুন, যিনি এই পৃথিবীর প্রতিটি মানুষকে রিযিক দান করে তাদের বাঁচিয়ে রেখেছেন, যিনি মুসার (আলাইহিস সালাম) সামনে সাগরের মাঝ দিয়ে পথ তৈরি করে দিয়েছিলেন, যিনি ইউনুসকে (আলাইহিস সালাম) মাঝের পেটে বাঁচিয়ে রেখে আবার তাকে তীরে তুলে দিয়েছিলেন, যিনি ইব্রাহিমকে (আলাইহিস সালাম) আগুনের লেলিহান শিখার মাঝে নিক্ষেপ করার পরেও তাকে শান্তিময় বাগান তৈরি করে দিয়েছিলেন, যিনি ইব্রাহিম খলীলুল্লাহকে বার্ধক্য এসে পড়ার পরেও ইসমাঈল ও ইসহাকের মতন দু'জন সন্তান দান করেছিলেন, যিনি যাকারিয়্যাহ আলাইহিস সালামকে অনেক বয়সকালে ইয়াহইয়া আলাইহিস সালামের মতন সুযোগ্য নাবী সন্তান হিসেবে দিয়েছিলেন।

আল্লাহ ছাড়া আর কেউ নেই যার কাছে সাহায্য চাইতে পারি, আল্লাহ ছাড়া কেউ নেই যে আমাদেরকে কিছু দিতে পারেন। সমস্ত কল্যানের মালিক আল্লাহ, সমস্ত ভালোবাসা ও শান্তির মালিক আল্লাহ। তার কাছেই ভিক্ষা চাইতে হয়, তার কাছেই আবেদন করতে হয়। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবা কবুলকারী, দোয়া কবুলকারী...

আমার নারী, আমাদের নারী ও নারীমুক্তি

​​বেগম রোকেয়া 'জাগো গো ভগিনি' বলে ডাক দিয়েছিলেন ঠিকই। সত্যিকার অর্থে আমাদের বোনেরা জাগেননি। আরো পিছিয়েছেন। অন্তরমহলে বন্দী ছিলেন, তারা এখন পুরুষের লোলুপতায়  বন্দী হয়েছেন। ক্যামেরার সামনে নিজেদেরকে মেলে দেয়ার অদৃশ্য কারাগারে তারা বন্দী করেছে নিজেদেরকে। চেনা-অচেনা পুরুষের কাছে শরীর আর রূপের প্রশংসা শোনার জালে বন্দী করেছে নিজেদেরকে। কর্মজীবী হতে চেয়ে নিজেদেরকে দিনরাত পুরুষ করতে চেয়েছে নারী, অথচ পুরুষ কিন্তু নারীত্ব চায়নি।

নারীমুক্তি হতে পারতো বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নতির মাধ্যমে। বেগম রোকেয়া এটাই আহবান করেছিলেন যেন মানসিক দাসত্ব থেকে মুক্ত হয় নারী। বাংলার নারীরা মানসিক মুক্তি পায়নি কয়েকশত বর্ষ পেরিয়ে গেলেও। থাক সে কথা...

অনলাইনে নারীদেরকে নিজেদের মুক্তি করতে বাংলাদেশের নারীদের জন্য সত্যিকারের ইন্টেলেকচুয়াল প্ল্যাটফর্ম নেই বলেই মনে হয়ছে। বোনেরা যতই নারী নিয়ে লিখতে যান, তারা পুরুষবিদ্বেষী লেখা লিখে বসেন। ফলে যা হবার তাই হয়, পুরুষ আরো তাতিয়ে উঠে, কাজের কাজ হয় না। আমি মুখ্যু মানুষ, অনুরোধ রাখবো পুরুষবিদ্বেষ ফ্রেমে না আটকে থেকে আমাদের বোনেরা ও ভাইয়েরা নারী নিয়ে লিখতে গিয়ে আমাদেরকে চমকৃত করবেন এমন সব আয়োজনে যেখানে নারী ও পুরুষ যে একে অপরের পরিপূরক সেই শিক্ষাটা পাওয়া যায়।

আমার মনে হইসে, আমাদের অনেক বেশি অভাব আত্মিক উন্নয়নের, অনেক বেশি অভাব জ্ঞানের। তা পুরুষ হোক, অথবা নারীরই হোক। কেউ নিজেদেরকে নিয়ে তেমন ভাবতে চায় না, অপ্রাপ্তির হিসেব করলে কোনদিন প্রাপ্তি একটা বাড়ে না, কেবল দুঃখ বাড়ে। আর এইরকম অজস্র অনায্য অভ্যাসে ভরা সংসারে পরিবর্তনের জন্য লাগবে অন্তর থেকে পরিবর্তন, প্রথা আর চিন্তাধারার পরিবর্তন।

নারীর উন্নতির জন্য পুরুষের সাহায্য দরকার, পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো দরকার। নারীর 'সমান অধিকার' নামক বিচিত্র শব্দ থেকে বেরিয়ে এসে 'প্রয়োজনীয় অধিকার' অর্জন করা উচিত। মা হতে পারেনা পুরুষ, কোমলতা আর ভালোবাসার দৃষ্টান্ত দেখাতে নাম আসে না পুরুষের; দিনে-রাতে, যেখানে-সেখানে যেন-তেনভাবে কাজ করার যোগ্যতা নেই নারীর, শারীরিক ও মানসিক প্রবল চাপে পিষ্ট হয়ে একলা চলতে পারে না নারী...

হয়না তবু জোর করে হওয়ানোর এই অদ্ভুত চেষ্টার বোকামি করতে না গিয়ে নিজ নিজ কর্তব্য, দায়িত্ব ও ভালোবাসা বুঝে পেতে যতটুকু শ্রম দেয়া দরকার -- সেই জ্ঞানটুকু অর্জনে চেষ্টা করা উচিত পুরুষ এবং নারী উভয়েরই...