17 October 2014

পর্নোগ্রাফি ও সংসার

​​একটা খুব প্রয়োজনীয় কথা, একটা সিরিয়াস সতর্কবাণী। অবিবাহিত মুসলিম ভাই-বোনদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। অনেকের ধারণা -- "বিয়ের আগের কিছু খারাপ স্বভাব আছে, বিয়ে হলে হয়ত কেটে যাবে, ব্যাপার না।" -- ব্যাপারটা সম্পূর্ণ ভুল।

পাশ্চাত্যের দেখাদেখি পর্ণোগ্রাফি আমাদের সমাজেও মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। ফেসবুকেও অজস্র পর্ণগ্রাফিক ফটোর ছড়াছড়ি। ছেলে এবং মেয়ে কেউ বাদ যায় না এসব ছবি দেখার হাত থেকে। অনেক ছেলেরাই পর্ণগ্রাফি মুভি এবং গল্পসমূহের নেশার শিকার। মনে রাখবেন, পর্ণগ্রাফি কোন অভ্যাস নয় শুধু, এটা একটা নেশা -- নিউরোসায়েন্টিস্টরা বিষয়টাকে ভয়াবহ নেশা হিসেবেই ব্যাখ্যা করেছেন। একসময় অভ্যাস হয়ে তা মনের ভিতরে প্রোথিত হয়ে যায়।  অজস্র সংসার ভেঙ্গে যাচ্ছে কেননা বিয়ের পরে স্ত্রী আবিষ্কার করেন তার স্বামী তাকে আসলে পর্নোগ্রাফি নায়িকার মতন করে চাচ্ছে। ক্রমাগত পর্ন মুভি দেখতে দেখতে অনেকেই মানসিকভাবে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। বিয়ের পরেও ছাড়তে পারে না।



সময় থাকতেই সাবধান হোন। এই নেশা কাটিয়ে উঠুন। মুখে যত ভালো কথাই বলুন না কেন, সবাই আপনাকে যতই ভালো মানুষ জানুক না কেন, স্ত্রী ঠিকই বুঝতে পারে সেই পুরুষ মূলত কোন পর্যায়ের চরিত্রবান। একজন পুরুষের চরিত্রের ব্যাপারে তার স্ত্রীর সাক্ষ্যই গ্রহণীয়।

চলমান সমাজে এরকম সমস্যা অনেকের হয়ত হয়ে গেছে। কিন্তু আজই নিজেকে বদলে ফেলতে উদ্যোগ নিন। তাওবাহ করুন। একাকীত্ব এড়িয়ে চলুন, কুরআনের সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি করুন। ফরয নামাযের সাথে নফলের পরিমাণ বাড়িয়ে দিন। আল্লাহকে ভয় করে চোখ ও লজ্জাস্থানকে সংযত করুন।

আপনার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সমস্যা আগামীতে সংসার ভেঙ্গে যাওয়ার বড় কারণ হতে পারে যদি আজই সতর্ক না হোন। আল্লাহ বান্দাকে সাহায্য করেন যখন সে ভালো নিয়াত করে। আল্লাহ আমাদের সকল ভাই ও বোনদের সাহায্য করুন এবং সুন্দর চরিত্রবান একটি সমাজের অংশ হিসেবে সবাইকে কবুল করে নিন।

 * * * * * 
[২]

পর্নোগ্রাফির থাবা এই সমাজে কত গভীরে ঢুকে গেছে তা কল্পনাতীত। একদিকে নামাজি ছেলেমেয়ের সংখ্যা খুবই নগন্য, অনেকগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিজাব ব্যান করেছে; অন্যদিকে 'শাহবাগী মুসলিমদের' মতন নামকাওয়াস্তে মুসলিমে ছেয়ে গেছে। এরা থাবাবাবার মতন নিকৃষ্টের জানাজা পড়েছে, রাসূলের (সা) পরিবারকে নিয়ে লেখা কুরূচিময় বিকৃত ব্লগগুলোকে তারা স্বাভাবিক চোখে(!) দেখে-- আসলে এদের বোধ মরে গেছে । এমন বিকৃত রূচি আর অসুস্থ মানসিকতায় গড়ে উঠছে 'সেক্যুলার' শিক্ষায় সেকুলার কালচারের বাংলাদেশ। আমাদের সমাজে শরীরস্বর্বস্ব ছেলেমেয়েদের তাই এখন বাম্পার ফলন।

ছোট ছেলেমেয়েরা মোবাইল ফোন, টাবলেট আর কম্পিউটারে কী করে? গেম খেলে? কতক্ষণ? বাবামায়েরা খোঁজ রাখে কি? সেদিন দেখলাম একটা রিকসায় ঘোমটা পরা সাধারণ বাঙালি মায়ের পাশে বসে স্কুলগামী ছেলে মোবাইলে ফেসবুক চালাচ্ছে, দূর থেকেও তার মোবাইল স্ক্রিণে স্বল্পবসনা মেয়েদের ছবি স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল। মা তার পুত্র সন্তানকে পাশে নিয়ে বসে আছেন যখন তার ছেলে চোখ দিয়ে মেয়েদের গিলে খাচ্ছে... ক'দিন পর তার তৃষ্ণা বেড়ে যাবে, তখন কি আর শুধু বান্ধবীদের ফটোতেই সে সন্তুষ্ট থাকবে? তার নেই শিক্ষা, নেই সঠিক নিয়াতে বিয়ের সম্ভাবনা, তাহলে পাপাচারের ভবিষ্যত ছাড়া আর কিছু রইলো কি? থাকেও না, এরা কিছুদিন পরেই প্রেম-ডেটিং ইত্যাদিতে আনন্দ খুঁজে নেয়। বল্গাহীন জীবনের সীমাহীন যন্ত্রণা যার জীবনের সমাপ্তি।

সাইবার ক্যাফেতে গেলে প্রায় সবসময় ব্রাউজার হিস্টরিতে দেখতে পাওয়া যায় পর্নোগ্রাফি সাইটের নাম। গুগলে বাংলায় কিছু চাপতে গেলে ভেসে ওঠে নোংরা সব সার্চ কী-ওয়ার্ড। এগুলো বলেই দেয় এই দেশের উঠতি এবং বয়ষ্ক গোষ্ঠীর চিন্তার মাঝে কী পরিমাণ কদর্যতা মিশে গেছে। শহরে হাইস্কুলে পড়া মেয়েদের মাঝে খুব কমই বয়ফ্রেন্ড না থাকাতেই মুক্তি খুঁজে পায়। পর্নোগ্রাফি এদের মোবাইলে খুব সহজেই ঢুকে পড়ে। অভিভাবকরা হয়ত জানে না, জানলেও কিছু বলে না। অদ্ভুত বিচিত্রতায় ভরপুর এই সমাজ এখন।

প্রেম নামক সম্পর্কটা আগেও হারাম ছিলো, এখনো আছে। এখন ছেলেমেয়েরা প্রেম করলেই তাতে শরীর জড়িয়ে নেয়। প্রেম করে 'ছ্যাকা খেয়ে কেউ কান্নাকাটি করে, অন্যেরা 'শরীরের পাপ' ঝেড়ে ফেলে এগিয়ে যায় নতুন পাপে, আবার কেউ কেউ গলায় দড়ি দিয়ে পটল তুলে নেয়। ছোট ছোট ছেলেমেয়ে, ফোনে অপরিচিতদের সাথে আলাপে মাস্তি করে। নাটক আর টেলিভিশন বলে দিচ্ছে তাদের প্রেম করতে হবে, প্রতিটি বিলবোর্ড বলে দিচ্ছে তাদের প্রেম করতে হবে।

এগুলো শেষ করা সম্ভব নয় রাতারাতি। নোংরামি, পাপাচার, ধর্মহীন, ইসলাম বিদ্বেষের এই কুৎসিত সমাজে একমাত্র আল্লাহর ভয়, আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা এনে দিতে পারে নতুন প্রাণ, নতুন সতেজতা, নতুন এক সুন্দর পৃথিবী.. 

3 comments:

  1. আল্লাহ বান্দাকে সাহায্য করেন যখন সে ভালো নিয়াত করে। আল্লাহ আমাদের সকল ভাই ও বোনদের সাহায্য করুন এবং সুন্দর চরিত্রবান একটি সমাজের অংশ হিসেবে সবাইকে কবুল করে নিন।

    ReplyDelete
  2. সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ এর জন্য যে আল্লাহর অশেষ রহমতে ব্ল্যাক ফ্ল্যাগ সিরিজের প্রথম বইয়ের অনুবাদ “খোরাসান থেকে কালো পতাকা” প্রকাশিত হয়েছে। হলুদ মিডিয়া যা জানতে দিবে না তা জানতে পড়ুন এই বইগুলো।

    বইটি আপনারা এখান থেকে ডাউনলোড করতে পারবেন। এছাড়া অনলাইনেও পড়ার ব্যাবস্থা ও আলাদা প্রবন্ধ হিসেবে পড়ার ব্যাবস্থাও আছে।

    http://blackflagseriesinbangla.wordpress.com/

    https://www.facebook.com/blackflagseriesinbangla

    ReplyDelete
  3. আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভাল লিখেছেন।খুব খারাপ সময় পার করছি আমরা।ওস্তাদ নোমান আলি খানের মতে,
    "Today, we live in an ultimately shameless world, a world in which streaming videos of any website are available on your mobile device."

    ReplyDelete