15 October 2014

ফেসবুক কোন ম্যাচমেকিং মিডিয়া নয়

​​​​বিয়ে করতে উতলা হয়ে বিছানা কাটাকাটিতে বসে যাওয়া, আম্মাকে ফোন করে শীতের দিনে সবার বিয়ে হওয়ার আলাপ করতে বসে যাওয়ার গল্পগুলা কেবল রম্যতেই মানায়। বাস্তবে এসব কাপুরূষতা। বিয়ে করতে সাহস লাগে। পুরুষ হিসেবে আপনার বিয়ে করার আগ্রহটা কোন ফান না। রাতের বেলা একলা লাগে, শীতের দিনে একলা লাগে বলে ফেসবুকে পোস্ট দেয়া খুবই লজ্জাজনক ব্যাপার।


পুরুষ সংসারের কর্তা, নেতৃত্বের কাজটা তাকেই করার দায়িত্ব দেয়া রয়েছে। এটা হাত কচলানোর বিষয় না, বন্ধুদের কাছে সরস গল্প করার বিষয় না। বাংলা ভাষায় একটা শব্দ আছে--'হ্যাডম'। আপনি যদি পুরুষ হন এবং আপনার যদি বিয়ে করার 'হ্যাডম' থাকে তাহলে সরাসরি সেটার ব্যাপারে বাবা-মাকে জানান।

বিয়ে আপনি কেন করবেন সেটা আপনি স্পষ্ট তো? কেবল একলা লাগে বলে, সবাই প্রেম করে বলে বিয়ে করতে যাওয়া একটা নির্বুদ্ধিতা। বিয়ে কোন ডেটিং না। বিয়ে একটি ইবাদাত, একটি দায়িত্বের নাম। বিয়ের পরের জীবনে আনন্দ যেমন আছে, দায়িত্ব এবং কর্তব্য পালন করতে না পারলে সীমাহীন ভোগান্তিও আছে। একটা মেয়ের ভরণপোষণ ও তার মানসিক-আবেগিক সঙ্গী হবার দায়িত্ব নিয়ে আপনি তাকে স্ত্রী করে নিয়ে আসবেন, আপনাকে আপনার উপার্জনের ব্যাপারে স্পষ্ট ও সচেতন থাকতে হবে। যে পুরুষ বাপ-মায়ের কিংবা শশুরের উপরে তার স্ত্রীকে ছেড়ে দেয়, তার ব্যক্তিত্ব বলে কিছু থাকে না; তার স্ত্রী সেই স্বামীকে নিয়ে আত্মবিশ্বাসী হতে পারে না।

আপনি যদি মনে করেন আপনি প্রাপ্তবয়ষ্ক, আপনার সঙ্গিনী দরকার। তাহলে সবার আগে আপনি দায়িত্বশীল হউন, কাজে কর্মে তা অভ্যাস করুন। ফেসবুকে আবিয়াইত্তা পোস্টিং করার মাঝে আপনার সিরিয়াসনেস প্রকাশ পায় না। ভার্চুয়াল মজা করার সাথে বাস্তব জীবনের দায়বদ্ধতার অনেক ফারাক আছে। ফেসবুকের পোস্ট দেয়ার চেয়ে আপনার নিজের সাথে বোঝাপোড়া বেশি দরকার।

আপনার বাসায় জানান আপনি বিয়েতে আগ্রহী। বাংলাদেশের খুব কম পরিবার ছেলের পড়াশোনার খরচ এবং তার বৌকে পালতে সমর্থ থাকে/আগ্রহী থাকে। তাই আপনাকে আপনার চরিত্র সুরক্ষায়, দ্বীনের অর্ধেক পূরণে আপনার সিরিয়াসনেস, আগ্রহও প্রকাশ করতে সরাসরি আব্বা আম্মার সাথে কথা বলতে হবে। যে ছেলে নিজের বাবা-মায়ের সামনে বিয়ের কথা প্রকাশে লজ্জা পায়, সাহস পায় না, সে তার স্ত্রীর ভরণপোষণ,মানসিক ও আবেগিক প্রয়োজন পূরণে সামর্থ্য রাখবে সেকথা কি কেউ বিশ্বাস করবে?

ফেসবুক অনেক সিরিয়াস বিষয়কে ফান আর শেয়ারিং করে সস্তা করে দিয়েছে, বিয়েটা তার অংশ না হোক।


* * * * * *  *
[২]

অনেক ভাইদেরকে ইদানিং দেখা যায় ফেসবুকে বিভিন্ন কমেন্ট বক্সে প্রকাশ করেন যে তারা বিয়েতে আগ্রহী, কোন মেয়ে থাকলে যেন তাদের সাথে যোগাযোগ করে।

নিঃসন্দেহে সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলো, যেমন ফেসবুক এখন মানুষকে খুব সহজেই কানেক্ট করে দেয়। অচেনাদেরকে চেনাজানা করে দেয়, অনেক ভাবনাচিন্তার খোরাক যোগায়, অনেক সময় কাটানোর সুযোগ হয়। কিন্তু হে ভাই! আপনি কেমন করে মনে করলেন খোঁস-পাচড়ার মলম বিক্রেতার মতন যেখানে সেখানে বিয়ের আগ্রহ প্রকাশ করলে বিয়ে হয়? যে নারী একজন পুরুষকে আঁকড়ে ধরে থাকবেন বাকীটা জীবন, সে পুরুষটিকে চান ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, দায়িত্বজ্ঞানসম্পন্ন। একজন নারী চান তার স্বামী তাকে সম্মানিতা করে রাখবেন। কমেন্ট বক্সে, ইনবক্সে বিবাহে আগ্রহ পুরুষদের প্রতি সেই বিশ্বাস প্রথমেই থাকে না। বিয়ের আগেই যে কোন মেয়েকে যথেষ্ট সম্মানিত উপায়ে যোগাযোগ করতে পারছে না, বিয়ের পর সে কোন নারীকে কেমন করে সম্মান দেবে?

একইভাবে যেসব মেয়ে জানালার পাশে গ্রিল ধরে, গাছের পাতা ধরে, বিছানায় বসে, এদিক-ওদিক তাকিয়ে, ইনিয়ে-বিনিয়ে নানানরকম ছবি ফেসবুকে আপলোড করে মনে করেন এতে করে 'যোগ্য' ছেলেরা তাদের প্রতি আগ্রহী হবে-- এটাও চরম ভুল। প্রকৃতপক্ষে নিজেকে সস্তা করে উপস্থাপন করার মাঝে কোন কল্যাণ নেই। ওসব ছবি দেখে কেবল ঐ 'ছবিওয়ালিকেই' কোন ছেলে পছন্দ করতে পারে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে একটি নারীর ব্যক্তিত্ব, তার আবেগ ও চিন্তাধারাকে আপন করে নেয়া একটা পুরুষের জন্য খুব দরকারি। তাকেই জীবনে আপন করে নিন যে সঠিক উপায়ে আপনাকে বিয়ে করতে চায়। যে পুরুষটি সরাসরি বা কারো মাধ্যমে কোন মেয়ের বাবা/ওয়ালির সাথে যোগাযোগ করে বিয়েতে আগ্রহী হয় এবং নিজের চিন্তাভাবনা ও যোগ্যতা প্রকাশ করে সঠিক উপায়ে কোন মেয়ের সাথে বসে আলাপ করে বিয়ের সিদ্ধান্তের দিকে অগ্রগামী হয় -- সেই প্রকৃতপক্ষে সম্মানিত, সেই মেয়েটিও সম্মানিত উপায়েই বিয়ের পথে এগিয়ে যায়। পুরুষ হিসেবে যোগ্যতা প্রকাশ করতে সদর দরজা ধরে বাবা-মায়ের সামনে বসে ইন্টারভিউ দিয়ে দিয়ে তবেই মেয়েটির হাত ধরে তাকে অর্জন করতে হয়।

বিয়ে কোন ডেটিং টাইপের ব্যাপার না। বিয়ের সাথে কল্পনাতীত দায়িত্ব ও সচেতনতা মিশে থাকে। যারা কিছু ত্যাগ করে, তারাই কিছু অর্জন করে -- তা বিবাহইচ্ছুকদের মনে রাখা বাঞ্ছনীয়। বিয়ে জীবনের সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্তগুলোর একটি। নিজেকে সস্তা বানিয়ে বিবাহইচ্ছুক প্রকাশের মানে হয় না। আপনি আল্লাহর কাছে চাইতে থাকুন, পরিচিত দ্বীনী মুরুব্বিদেরকে জানিয়ে রাখুন আপনার আগ্রহের কথা, আপনার পছন্দের কথা। নিজেই নিজের সাথে বসে চিন্তা করুন কেমন জীবনসঙ্গী আপনার পছন্দ। এরপর অন্যদের জানিয়ে দিন কেমন সঙ্গী/সঙ্গিনী আপনার পছন্দ।

সৎ পুরুষ ও নারী তাদের চিন্তা ও আচরণে স্পষ্ট ও দৃঢ় হয়। সততা আসে ঈমানের দীপ্তি থেকে। আল্লাহ আমাদেরকে উত্তম জীবনসঙ্গী/জীবনসঙ্গিনী দান করুন যারা আমাদের চোখ শীতলকারী হবে।

No comments:

Post a Comment