8 March 2016

জীবনসঙ্গী খুঁজছেন কিন্তু পাচ্ছেন না? তাহলে আপনার জন্যেই এই লেখা

​​​চারপাশে সবাই বিভিন্ন দিবসের নামে সেজেগুজে বেড়াচ্ছে... প্রচুর ছেলে দেখা যায়, প্রচুর মেয়ে দেখা যায়। কিন্তু আপনার জীবনসঙ্গী হবার মতন কোন মানুষকে আপনি মনে মনে হলেও কোথাও খুঁজে পান না, তাইনা? হয়ত ভাবছেন, কোথায় পাবেন আপনার মানুষটাকে, কে খুঁজে দেবে আপনার উপযুক্ত জীবনসঙ্গী/জীবনসঙ্গিনী?


* * * * * * * * * * * * * * * * * *
(১)

 যেই আপনি আজ রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে আগামী সপ্তাহে কোন বেলায় কী খাবেন সেই বিষয়ে কোন ধারণা না থাকলেও টেনশন ছাড়াই ঘুমাতে যাচ্ছেন, কেননা আল্লাহ আপনার জন্য যেভাবেই হোক কোন না কোনভাবে উপায় বের করে দেন খাবারের... সেই আল্লাহই আপনার জন্য উত্তম সঙ্গী/সঙ্গিনী খুঁজে দিবেন।

তিনি আপনাকে এসব নিয়ে চিন্তায় অস্থির হতে বলেছেন? আল্লাহ ছাড়া কে আছে মুমিনের উত্তম অভিভাবক? 'হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি'মাল ওয়াকিল' বলে আপনি কি দোয়া করছেন না 'রাব্বানা হাবলানা মিন আযওয়াজিনা ওয়া যুররিয়্যাতিনা কুররাতা আ'ইয়ুনিউ ওয়া জা'আলনা লিল মুত্তাকিনা ইমামা'?

তাহলে আপনি নিশ্চিত জেনে রাখুন, এই পৃথিবীর কোন এক কোণে আপনার জন্য একটা মানুষকে আল্লাহ বড় করছেন। আপনি যখন কান্নাকাটি করে অশ্রুভেজা প্রার্থনা করছেন যেন আল্লাহ তাকে সুরক্ষিত রাখেন, হেফাজত করেন এই সমাজের অশ্লীলতা/বেহায়াপনা থেকে, আল্লাহ তাকে যেন হতাশা থেকে দূরে রেখে ঈমানের পথে চলার তাওফিক দেন -- তিনিও কিন্তু আপনার জন্য বসে দোয়া করছেন আপনার মত করেই ইনশা আল্লাহ...

যে কাজের সাধ্য ও ক্ষমতা আপনার নেই, তা করতে গিয়ে অকারণে বোকা হতে যাবেন না। আল্লাহর কাছে দোয়া করুন, আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে চলুন। সবসময় আশাবাদী থাকুন। মনে রাখবেন, আল্লাহ আপনার জীবনের প্রতিটি নিঃশ্বাস সম্পর্কে ওয়াকিবহাল আছেন। আর তিনি তার প্রিয় বান্দাদেরকে কখনই অকল্যাণ হতে দিবেন না, দেন না। শুধু একটা চেষ্টাই করবেন -- আল্লাহর আরো কাছে যাওয়া, আরো বেশি প্রিয়ভাজন হওয়া, ঈমানকে আরো বাড়িয়ে আরো বেশি ইবাদাত করা... আল্লাহই আপনার অভিভাবক হয়ে যাবেন তখন, ইনশা আল্লাহ...

* * * * ** ** * *  ** * * * * * * * *  *
(২) 

বিশ্বাস রাখুন, আপনার মতই অবস্থা এই সমাজে, এই পৃথিবীতে প্রায় সকল মুসলিমের। কিন্তু আপনার জীবনটা অন্যরকম, একটু বেশিই সাদামাটা... কারণ আপনি আল্লাহর নির্দেশ মানতে চেষ্টা করছেন। সেই আল্লাহ, যিনি এই বিশ্বজগতের স্রষ্টা, যিনি সবকিছুর মালিক, যিনি আপনাকে এই পৃথিবীতে আপনার বাবা-মায়ের কাছে পাঠিয়েছিলেন, আপনাকে বড় করেছেন নানা খাদ্য-বস্ত্র-আদর-যত্ন দিয়ে...

আপনার অসহায়ত্বটুকু, অন্তরের ফরিয়াদটুকু আল্লাহর কাছেই বলুন। তিনি সবকিছু জানেন, আপনার কান্নাজড়া দোয়া তার কাছে খুবই প্রিয়। তিনি আপনাকে কী ভীষণ ভালোবাসায় জড়িয়ে রেখেছেন তা আপনার হাত দু'টোর দিকে তাকিয়ে, আপনার চিন্তা করার ক্ষমতাযুক্ত সত্ত্বার দিকে তাকিয়ে উপলব্ধি করুন। এরপর আশ্বস্ত হোন, যিনি আপনাকে এত ভালোবাসায় তৈরি করেছেন, তিনি আপনার জন্য একজন মানুষকে নির্ধারণ করে রেখেছেন।

আল্লাহ যখন চাইবেন, ঠিক তখনই তিনি আপনার সামনে এসে হাজির হবেন। যেই মানুষটিকে তিনি আপনার জন্য নির্ধারণ করে রেখেছেন, তিনি আপনার সামনে ঠিক সঠিক সময়েই হাজির হবেন। আপনি সেই মানুষটার জন্য দোয়া করুন যেন আল্লাহ তাকে হেফাজত করেন, যেন আল্লাহর ভালোবাসার মানুষ তিনি হন, যেন আপনাকেও আল্লাহ ভালোবাসেন এবং আপনারা দু'জনেই আল্লাহকে ভালোবাসতে পারেন সবচেয়ে বেশি।

স্বপ্নের নায়িকা বা নায়ক সাজাতে গেলে কষ্ট পাবেন। আপনি আপনার জীবনকে আল্লাহর হাতে সোপর্দ করুন। আপনি দ্বীনের পথে চলুন, দোয়া করুন যেন তিনি আপনাকে তার প্রিয় বান্দা/বান্দীকে আপনার সামনে হাজির করেন। আল্লাহর কাছে দোয়া করুন যেন তিনি তার প্রিয়তমদের কারো সাথে আপনার জীবনকে জুড়িয়ে দেন যিনি দুনিয়া ও আখিরাতে আপনার সঙ্গী হবেন...

দোয়া করতে থাকুন যেন আল্লাহ আপনাকে সেই মানুষটিকেই হাজির করেন, যিনি আপনার জন্য হবেন কল্যাণময়, সেই মানুষটি আপনার সামনে আসা এবং জীবনের মূল্যবান অংশ হয়ে যাবার সময়টা যেন সহজ হয়। আল্লাহর হাতেই সমস্ত ক্ষমতা, তিনিই অন্তরসমূহের মালিক। তার কাছেই দোয়া করুন। তাহাজ্জুদে উঠে দোয়া করুন, নফল নামাজ পড়ে দোয়া করুন। আল্লাহ সহজ করে দিবেন, আল্লাহ আপনার জীবনের জন্য সবচেয়ে সুন্দর মানুষটিকেই মিলিয়ে দিবেন ইনশা আল্লাহ...


* * *  * * * *  * * * * * * * * * * * * *
(৩) 

ধরুন আপনি বিয়ে করার নিয়াত করেছেন অনেকদিন হলো। হয়ত এখন মোটামুটি প্রস্তুতও... তবু আপনার কিছুতেই কিছু আগাচ্ছে না... হয়ত ভাবতে শুরু করবেন আল্লাহ কেন আপনার দিকে মুখ তুলে তাকাচ্ছেন না...

একটু থামুন ভাইয়া, শান্ত হোন আপু! গোটা জীবনে আল্লাহর লক্ষ কোটি নিয়ামাত উপভোগ করে এসেছেন আপনি, এমনকি, আল্লাহ আপনাকে দিচ্ছেন বা দিচ্ছেন না টাইপের যে ভাবনাটাতে যে আল্লাহর স্মরণ আছে, এটাও এই কোটি মানুষের পৃথিবীতে খুব অল্প কিছু মানুষের জীবনে থাকে। কিন্তু আপনার একটু শুধরে ভাবতে হবে। নিশ্চিত থাকুন, আল্লাহ আপনার জন্য কল্যাণকর এবং সর্বোৎকৃষ্ট অবস্থাটাই এখন দিয়েছেন। আপনি এখনো সুস্থ, আপনি এখনো চিন্তা করতে পারছেন, আপনি এখনো নিঃশ্বাস নিতে পারছেন। আপনি হয়ত এই নেয়ামতকে অস্বীকার করা অবস্থাতেই আল্লাহর ডাকে চলে যেতে পারেন। একটা শুধু বিয়ে না হওয়ায় কি আপনি সেই ভয়াবহ অন্যায়কারী হিসেবে আল্লাহর কাছে যেতে প্রস্তুত? আল্লাহ মাফ করুন যেন অমনটা আমাদের কারো জীবনে না হয়...

এবার নিজেকে প্রশ্ন করুন তো, আপনি কি আল্লাহর কাছে নিজেকে পুরোপুরি সঁপেছেন? আপনি কি আপনার উপরে আবশ্যক ইবাদাতগুলো পালন করছেন? যে আল্লাহ আপনাকে দান করবেন, তার সকল আদেশ-নিষেধ মানার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন কি? আল্লাহ হয়ত চাচ্ছেন আপনি নিজেকে আরো শুধরে নিন এবং নিজেকে যোগ্য করুন তার প্রিয় কোন বান্দার উত্তম জীবনসঙ্গী বা জীবনসঙ্গিনী হয়ে নিতে... আল্লাহ হয়ত চাচ্ছেন আপনি শেষ রাতে উঠে তাহাজ্জুদে তার কাছে কান্নাকাটি করুন একজন এমন সঙ্গীর জন্য যাকে তিনি ভালোবাসেন, যাকে আপনি ভালোবাসলেও আল্লাহ আপনাকে ভালোবাসবেন। আল্লাহ হয়ত চাচ্ছেন, আপনি আরো বেশি সাদাকাহ করুন।  আল্লাহ হয়ত চাইছেন আপনি ফরজ ইবাদাতে একদম দৃঢ় হয়ে যান এবং সুন্নাহগুলোর মাধ্যমে জীবনকে সাজিয়ে ফেলুন। আল্লাহ হয়ত চাইছেন আপনার চোখ জুড়ে আসা অশ্রুগুলো আরো বেশি আল্লাহর কাছে চাইতে থাকা অবস্থায় ঝরুক। আল্লাহ আপনার অশ্রুগুলোকে হয়ত ভালোবাসেন।

এমন অনেক নিদর্শন হয়ত আল্লাহ আপনার এই বিলম্বের মাঝে নিহিত রেখেছেন। আপনি কি আপনার ঈন্দ্রিয়গুলোকে সচেতন রেখেছেন আল্লাহর নিয়ামাত আর রাহমাতকে বুঝতে চেয়ে? আপনি কি আল্লাহর আরো শোকরগুজার বান্দা হবেন না যে শিক্ষা আমরা পাই রাহমাতাল্লিল আলামীন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবন থেকে? দু'রাকাত সালাত আদায় করে আল্লাহর কাছে কাঁদতে পারেন এই কথাগুলো ভেবে, হে আল্লাহ! আপনার জন্যই আমার জীবন, আমার মরণ, আমার এই সালাত, এই ত্যাগসমূহ... আপনি আমাকে দয়া করুন, আপনি তো রাহমান, রাহীম। আপনি আমাকে একজন মানুষকে ভিক্ষা দিন যাকে আপনি ভালোবাসেন। আমি তো কেবল আপনার কাছেই দোয়া করি এবং আপনার কাছেই আশ্রয় চাই। নিশ্চয়ই আপনিই কেবল দাতা, আপনি জানেন যা প্রকাশ্য এবং গায়েব। আপনি ছাড়া আর কেউ নেই আমাদের সাহায্যকারী।

No comments:

Post a Comment