26 January 2014

ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও আপনার বিয়ে হতে দেরি হচ্ছে? ধৈর্যহারা হয়ে পড়ছেন?

অনেক মুসলিমাহ বোন খুব চমৎকার; তারা দ্বীনদার, সত্যিকারের সুন্দর মন নিয়ে নিজেকে গড়ে তুলেন। সংসারের অনেক টানাপোড়েনেও নিজের প্রতি অত্যাচার না করে ধৈর্যধারণ করেন আর দ্বীনী জ্ঞানে ও কাজে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন। অথচ এই সত্যিকারের অসাধারণ মেয়েটির বিয়ে নিয়ে সবখান থেকেই অনেক দুঃখজনক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়। অনেক সময় দেখা যায় চেনাজানা 'আধুনিকা' মেয়ে যারা অনেক ছেলেদের সাথে সম্পর্ক রাখত, ভালো ছেলের সাথে বিয়ে হয়ে যায়। অনেক সময় চোখের সামনেই দ্বীনদার এক ভাইয়ের কাছে এমন মেয়ের বিয়ে হয়ে যেতে দেখেন, যে হয়ত লুকিয়ে প্রেম করতো; একসময় বাবা-মা তার বিয়ের আয়োজন করলেন। এদিকে হয়ত বোনটির বয়স একটু একটু করে বেড়ে চলেছে, মনটাও কেমন যেন রাফ এন টাফ হয়ে যাচ্ছে...

একই ঘটনা অনেক দ্বীনদার ভাইয়ের ক্ষেত্রেও হয়। সবসময় চোখ নামিয়ে পথ চলেছেন। টিভি-মুভি নিয়ে নিজেকে ফিতনা থেকে বাঁচিয়ে চলেছেন। দ্বীনের কাজে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। প্রেম করেননি যত ইচ্ছেই হোক, বরং তার অনাগত স্ত্রীর জন্যই নিজের আবেগগুলোকে জমিয়ে রেখেছেন। অথচ পড়া শেষ করে চাকুরি করে বিয়ে করতে হবে তার, পারিবারিক অর্থসংকটের কারণে। অথবা হয়ত একটা চাকরিও জুটিয়েছেন তবু আধুনিকা মেয়ে ছাড়া পর্দানশীন দ্বীনদার মেয়ে পাচ্ছেন না বছরের পর বছর ধরে চেষ্টা করেও। ধৈর্যহারা হয়ে পড়ার অবস্থা...

এমন ভাই ও বোনদের অবস্থা জানতে পেরে আমাদের নিজেদেরই খারাপ লাগে। আমরা জানি উত্তম চরিত্র কতটা কঠিন, কতটা অমূল্য, কতটা দারুণ ব্যাপার। আর সেই জিনিসটা অর্জন করতে একটা মানুষকে কতটা যুদ্ধ করতে হয় নিজের নফসের সাথে। তবে, যেই কষ্ট কেবল আল্লাহর জন্য, তার প্রতিটি মূহুর্তের উপহার আল্লাহ অবশ্যই বহুগুণে বাড়িয়ে দিবেন। তবে আমরা এটাও জানি, মুসলিম সমাজে এইরকম হবার কথা ছিলো না। ১৪৫০ বছর আগে যেই আদর্শ সমাজ গড়ে উঠেছিলো --তাতে বিয়ে ছিলো স্বাভাবিক, যেকোন যিনা ছিলো মৃত্যুসম আতঙ্কের বিষয়। তখন বিয়ের জন্য বসে থেকে বোনদের প্রোডাক্টিভিটি আর মন পচে যাওয়ার অবস্থা হতো না, ভাইয়েরাও দিনরাত কামের প্রচারণার সমাজে যুদ্ধ করতেন না। তারা তাদের গোটা মনোযোগটাই আল্লাহর দ্বীনের কাজে দিতেন। নিজের স্ত্রী কিংবা স্বামী ছাড়া অন্য কোন হারাম সম্পর্কের কথা ভাবতেও যেতেন না।

হ্যাঁ বোন, হ্যাঁ ভাই, আপনার কষ্ট লাগাই স্বাভাবিক। কিন্তু ভেবে দেখুন, আমরা তো জানি আমাদের সময় ধীরে ধীরে কিয়ামতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা জানি ধীরে ধীরে এই সমাজ আরো অশ্লীলতার দিকেই যাবে, হত্যা-ফিতনা-ফাসাদের দিকে যাবে। আমরা তো এটাও জানি, এইরকম সমাজে আমাদের প্রতিটা ত্যাগ, প্রতিটা চেষ্টার মূল্য আল্লাহর কাছে অনেক হবে বেশি পাওয়া যাবে। ফিতনার সময়ে, কঠিন সময়ে যারা ঈমানকে রক্ষার জন্য কষ্ট করে, তাদের মর্যাদাই অন্যরকম। আমরা এটাও জানি, প্রতিটি মানুষকেই ঈমানের পরীক্ষা দিতে হবে। সেই পরীক্ষা সবার সবকিছুতে হয় না। আপনার হয়ত বিয়ে নিয়েই হচ্ছে।

আপনি তো জানেন, আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাদেরকে বিপদে ফেলেন, ফলে তারা আরো বেশি করে আল্লাহর উপরে নির্ভর করে, কান্নাকাটি করে, ঈমানকে আরো উঁচুতে তুলে নেয়। আল্লাহ তাদের এর বিনিময়ে অনেক উচ্চ মর্যাদা দান করতে পারবেন আখিরাতে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা আপনার প্রতিটা নিঃশ্বাসের খবর রাখেন হে প্রিয় ভাই, হে প্রিয় বোন। ধৈর্যহারা হবেন না। আল্লাহর জন্য এই জীবন, প্রশান্তচিত্তে ইবাদাত করে চলুন।

এই তো আর মাত্র অল্প ক'টা দিন। এই অবস্থা বদলে যাবে একদিন। আপনি সেদিন নিজের কাছেই ভালো ফিল করেবেন যে কঠিন সময়টাতেও আল্লাহ আপনাকে শক্ত থাকার, তাওয়াক্কুল করার সুযোগ দিয়েছিলেন আলহামদুলিল্লাহ। প্রাপ্তির আশা যার থাকে কেবল আল্লাহর কাছে, তার আর কীসের অপ্রাপ্তির যন্ত্রণা? যিনি সবর করছেন আল্লাহ তাকে পুরষ্কার দিবেন বলে, তার আবার কীসের না-পাওয়ার শঙ্কা? নিশ্চয়ই আল্লাহ এমন ভাই ও এমন বোনদের বেহিসাব পুরষ্কার দিবেন; আমরা তো কেবল আল্লাহর কাছেই আশ্রয় চাই, সাহায্য চাই।

1 comment:

  1. এই অবস্থা বদলে যাবে একদিন।

    ReplyDelete