12 March 2013

ফেসবুক কি তরুণ-তরুণীদের প্রেমকুঞ্জ?

এক দূরসম্পর্কের আত্মীয়ার কথা জানলাম কয়েকদিন আগে। মফস্বলের মেয়ে। সদ্য ইন্টার পাশ করা তরুণী। তারও ফেসবুক আছে। পড়ার চাপ নাই, হাতে প্রচুর সময়। ভাইয়ের ল্যাপটপ ইউজ করে। ফেসবুকে তার অনেক বন্ধু আছে। তারা প্রায়ই নাকি তাকে 'প্রপোজ' করে। "কি যে খারাপ হয় ছেলেরা!" আচ্ছা, সে কি করে? প্রচুর অচেনা অজানা ছেলেদেরকে ফ্রেন্ড লিস্টে অ্যাড করেছে। যেটুকু জানি, সে তাদের সাথে চ্যাটিং-ও করে নিয়মিত।

একজন অবিবাহিতা প্রাপ্তবয়ষ্ক সুন্দরী/মানানসই তরুণী তার সময় কাটাতে নেটে ছেলেদের সাথে চ্যাটিং করতেই পারে, এবং ফলশ্রুতিতে অনেক প্রপোজ পেতেই পারে। ফেসবুকে চ্যাট করতে বসে ছেলে বনাম মেয়েরা কি নিয়ে আলাপ করে? দেশ-বিদেশ? সংস্কৃতি? দর্শন? ইতিহাস? অর্থনীতি? আপনার কি মনে হয় পাঠক? এই জগতে কয়জন আছে এরকম উন্নত চিন্তার? খুবই কম। আফটার অল, থাকলেও তারা আলাপচারিতায় আবেগীয় গল্পই করবে --এটাই স্বাভাবিক।



বাংলাদেশের পরিবারগুলাতে মেয়ে আর ছেলেরা বড় হয়ে যায় ধ্যাঙ্গা-ধিঙ্গি টাইপের। তাদের হাতে ইন্টারনেট থাকে, তাদের ফেসবুক থাকে। ভাই-বোন-বান্ধবীদের বিয়েতে সাজুগুজু করা ছবি প্রোফাইল পিকচার থাকে। এইরকম ছবিওয়ালা মেয়েদের অ্যাড করতে নব্বই শতাংশ ছেলে ভাবে না। তাদের বিবাহের কোন সম্ভাবনাই থাকে না। বিলবোর্ডে আর বিজ্ঞাপনে শুধুই প্রেম আর প্রেম। নাটকে আর সিনেমাতে শুধুই প্রেম আর প্রেম। মেয়ে সুন্দরী, অ্যাট্রাকটিভ --- ছেলেরা ম্যানলি, ফ্রেঞ্চকাট, টাইট জামা, প্যাক ওয়ালা বডি।

বেশিরভাগ সময়ে এইসব ফ্লাটারিং প্রিয় মেয়েদের ছবিগুলা ছেলেদের কম্পিউটারে জমা হয়। আমি একটা ছেলেকে চিনি, যার কম্পিউটারে হাজার হাজার ফেসবুক মেয়েদের ছবি ছিল আজ থেইকা কয়েক বছর আগেই। তার একাকীত্বের খাবার ছিল এইসব ছবি, সেইটা কাছের ফ্রেন্ডদের অনেকেই জানত।

আদর্শ নাই, মোটিভেশন নাই, কাজ নাই, বিবাহ নাই, সম্পর্ক নিয়া জ্ঞান নাই, আছে যৌবনের চাওয়া, মনের চাওয়া, দিলের চাওয়া -- ফেসবুকে বন্ধু হও, কী দিয়া ভাত খাইছ সেই গল্প করো, কই কই সাজতে যাও, কার গান শুনো, তোমার বন্ধুরা তোমাকে সময় দেয়না তারা খারাপ এইসব কথা বলো।

এরপর একদিন বলাবলি হবে,

আম্মু আমাকে বকেছে।
-- ক্যানো, রাগ কইরো না।
আমার মন খারাপ।
-- গান শুনো। মন ভালো হবে
শুনতেসি। হাবীব-ন্যান্সির গান
-- বাহির বলে দূরে থাকো?
হ্যা। আমার অনেক ভাল্লাগে এইটা।
....
....
ব্লা ব্লা
....
....
-- তোমাকে একটা কথা বলি?
কি?
-- তোমাকে আমার খুব ভালো লাগে। আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি।
এ হয়না
-- কেন? ভালোবাসা তো স্বর্গীয়। ব্লা ব্লা ব্লা


[এরপর চলতে থাকি বলিউডি সিনেমায় দেখা ডায়লোগ, অথবা স্টার জলসার ডায়লোগ। একসময় এগুলো নিয়ে গ্যাঞ্জাম হয়। ফোনের টেপ ছড়ায়। দেখাদেখি হলে ছবি তুলাতুলি হয়। সেইগুলা ফোনে করে বন্ধুদের দেখায় ছেলেটা, বান্ধবীদের দেখায় মেয়েটা। এরপর একদিন ফ্যামিলি বাধ সাধে। বাপ মা খারাপ হয়। নইলে আরো অনেক খারাপ কিছু হয়। একান্ত ঘুরতে গিয়ে কত কীইতো হয়]


আমরা আমাদের ঘরের পুত্রকন্যাদের খবর রাখি তো? শাসন করে নতুন প্রজন্মের কেশাগ্রও যে বৃদ্ধ সম্প্রদায় কামাতে পারবেন না, সেই বিষয়ে নিঃসন্দেহ থাকা যায়। অভিভাবকত্ব জিনিসটা কত কঠিন সেইটা টের পাই। সেই সাথে ইডিয়ট পুরুষ ও মহিলারা যখন অভিভাবক হয় --তাদের প্রোডাকশন সন্তানগুলা হয় ইতর এবং অভদ্র। পরিবারের পিতামাতার চরিত্র ও আদর্শ, ভাইবোনের চরিত্র ও আদর্শ অন্যদেরকে প্রভাবিত করে।

কিন্তু সেই সাথে সবচাইতে বেশি দরকার --- মোটিভেশন, ইন্সপিরেশন।

এই মূহুর্তে আপনার ঘরের কিশোর-কিশোরীদের ভালোবাসা কি নিয়ে? তাদের কি সাহিত্য ও সংস্কৃতির ব্যাপারে ঝোঁক আছে? তারা কি জানে জীবনের উদ্দেশ্য কি? তারা কি এই ভারতীয় ছিনেমাতে ভেসে যাচ্ছে? বলিউডি গানে কি তার দিন কাটে? সুস্থ সংস্কৃতিকে তৈরি করার জন্য কাজ না করুন, আপনার অন্তত প্রার্থনা আছে তো? যারা বিকল্প কিছু সৃষ্টিতে এগিয়ে যাচ্ছেন তাদেরকে নষ্ট বলে গালি দিয়ে গর্তে না ঢুকে অনুপ্রেরণা দিচ্ছেন তো?

না হলে অপেক্ষা করতে থাকুন একটা দিনের। হয়ত আপনি বা আপনার পরিবার শীঘ্রই পত্রিকার পাতার একটি দুর্ঘটনার খবর হয়ে যেতে পারে। নইলে আজই জেগে উঠুন। নিজে বাঁচুন, পরিবারকে বাঁচান।


২৯ জানুয়ারী ২০১৩, সকাল ১১:০০

No comments:

Post a Comment