24 March 2014

যদি মনে করেন বিয়ের আগে প্রস্তুতি দরকার নেই তবে যেসব ক্ষতি হতে পারে

​​
​​​বিয়ের আগে সত্যিই অনেক প্রস্তুতি দরকার। যারা মনে করেন প্রস্তুতি ছাড়াই বিয়ে করলে সমস্যা নেই,তারা এখনকার সময়ে চারিদিকে দাম্পত্য কলহ এবং বিবাহবিচ্ছেদের পরিমাণ দেখলেই বুঝতে পারবেন মানুষে মানুষে অমিলগুলো এখন সংসারে সহাবস্থানে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াচ্ছে। যাই হোক, বিয়ের মূল প্রস্তুতিটা মানসিক, তবে এর সাথে আরো অনেক কিছুই চলে আসে। আপনাকে ফোকাসড হতে হবে। আবেগ থেকে বের হয়ে আসতে হবে। আপনাকে নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে, আপনি কি আসলেই আপনার জীবনটা আরেকজনের সাথে শেয়ার করতে প্রস্তুত?

বিয়েতে যদি মনে করেন আরেকজন কেবল আপনাকে 'সার্ভিস' দিবে, তাহলে আপনি সম্পূর্ণ ভুলের উপরে আছেন যা আপনাকে অশান্তি এনে দিবে নিশ্চিতভাবে। ঠিক  উল্টোটা যদি হয়, আপনি যদি আরেকজনকে কী কী 'কর্তব্য' পালন করে দিবেন তা চিন্তা করেন, এবং সেই কর্তব্য সম্পর্কে ভাবতে ভাবতে যখন নিজের অভ্যাসগুলো নিয়ে ভাবতে পারবেন -- তখন আপনি কিছুটা বুঝতে পারবেন আপনার এখনকার আপনি মানুষটার সীমাবদ্ধতাটুকু। এই চিন্তাটুকু করে যদি তেমন কিছুই বের করতে না পারেন, নিশ্চিত থাকুন আপনি এখনও তেমন কিছুই বুঝেননি আপনার দায়িত্ব ও কর্তব্য নিয়ে।

বিয়ের মাঝে আল্লাহ অনেক প্রশান্তি, আনন্দ ও দয়া রেখেছেন। কিন্তু একজন মানুষ কিন্তু মূলত দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে সংসার শুরু করে। একজন পুরুষ যখন বিয়ে করে, তখন সে তার স্ত্রী হওয়া নারীটির বাকি জীবনের সম্পূর্ণটার ভরণপোষণের দায়িত্ব নিয়ে নেয়। চিন্তা করে দেখেছেন তো আপনি কত বিশাল দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন? একইভাবে, একজন নারী যখন তার স্বামীর সংসারে যান, তিনি তার স্বামীর সংসারটির কর্ত্রী হয়ে তিনি সেই স্বামীর পরম বন্ধু হয়ে তার দেখাশোনা এবং মা হয়ে তার সংসারের সকল সন্তানদের জন্মদান এবং তাদের বড় করার মতন কিছু বিষয় কাঁধে নিয়ে ফেলেন। বিয়ের মূহুর্তটির পর থেকে এই ধাপগুলোসহ আরো অজস্র বিষয় অবধারিতভাবেই একজন পুরুষ বা নারীর কাঁধে চেপে বসে।

তাই, বিয়ে নিঃসন্দেহে অবহেলা বা হালকা করে নেয়ার বিষয় নয়। আপনার জীবনের সম্ভাব্য সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্তগুলোর একটি এই বিয়ে। সুতরাং, বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে আবেগের চেয়ে একটু মাথা ঠান্ডা করে নিজের যোগ্যতা নিয়ে ভাবুন। নিঃসন্দেহে আল্লাহ আপনাকে অনেক গুণ দিয়েছেন এবং অবশ্যই আপনি আরো কিছু সীমাবদ্ধতা নিয়ে আছেন। কী করলে আপনি নিজেকে উন্নত করতে পারবেন, কীভাবে সেই সংসার জীবনে শান্তি আনতে পারবেন সেই চিন্তা করে কাজ করতে থাকুন।

তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, বিয়ে করবেন যাকে, তার কিছু স্বভাব এবং আচার-আচরণ আছে, যা আপনার চেয়ে ভিন্ন হবে। তার কথাবার্তার বিষয় এবং ভালোলাগার বিষয়েও প্রচুর অমিল থাকবেই। তার পরিবার থাকবে, সেই পরিবারের প্রতি তার প্রচুর কর্তব্য থাকবে, আবেগ এবং জটিলতা থাকবে। যেই আপনি কথাবার্তা ভিন্ন হওয়ার কারণে অনেক বন্ধুদেরকে এড়িয়ে চলেছেন, সেই আপনি কি প্রায় পুরো অচেনা মানুষটির গোটা জীবনটাকে আপনি মেনে নিয়ে সম্ভাব্য কর্তব্যটুকু করতে মানসিকভাবে প্রস্তুত তো?

এই প্রস্তুতিগুলো না থাকলে দেখা যাবে আপনি হয়ত এমন কিছু আচরণ করে বসবেন যাতে আপনার সেই স্বামী বা স্ত্রী আঘাতপ্রাপ্ত হবেন। তার সেই প্রতিক্রিয়া থেকেই হতে পারে আপনার সংসারের অশান্তির শুরু। তাই ((যদি বিয়ে করতেই চান)) ব্যক্তিগত চরিত্র, চিন্তার ধরণ, সহিষ্ণুতা, সহমর্মীতা, সচেতনতা, পরোপকারিতা, দায়িত্ববোধ নামক গুণগুলো যথাসম্ভব অর্জনে নিজেকে নিয়োজিত রাখুন!!

আল্লাহ আমাদেরকে এমন পরিস্থিতিতে ফেলে দেন না যা আমাদের সমাধানের অতীত। এই বিষয়গুলোও অসম্ভব নয়। তবে, যদি কল্যাণ চান, যদি সুন্দর একটি দাম্পত্য জীবন আশা করেন, যদি সুখী পরিবার কামনা করেন তাহলে আপনাকে অবশ্যই এইসব কিছু বিষয়ে সচেতন হওয়া জরুরি। একটুখানি ভাবুন, নিজেকে নিয়ে কাজ করুন, প্রস্তুত হোন -- ইনশা আল্লাহ আপনি কল্যাণপ্রাপ্ত হবেন।

সবচেয়ে বড় কথা, আমরা কিছুই করতে পারিনা যদি আল্লাহ সাহায্য না করেন, যদি আল্লাহ কবুল না করেন। তাই, আল্লাহর কাছে খুব বেশি করে দোয়া করুন। দোয়া একটি ইবাদাত, দোয়া ঈমানদারদের জন্য এক অব্যর্থ অস্ত্র যা অসম্ভবকে সম্ভব করে দেয়। সুবহানাল্লাহ! আল্লাহ আমাদের উত্তম স্বামী/স্ত্রী হবার এবং পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আল্লাহ আমাদেরকে সুন্দর একটি সমাজ গঠনের তাওফিক দান করুন।

No comments:

Post a Comment