21 March 2013

তাল সামলানোর অন্তহীন এক যুদ্ধ হলো জীবন

আমার প্রিয় দিনগুলো অতীতে। প্রতিটা দিন যায়, জ্ঞানের পরিধি বাড়ে, পৃথিবীর ঘটনাগুলো পরিষ্কার হতে থাকে। প্রতিটি সম্পর্কের পেছনে মানুষের অনেক জটিলতা থাকে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের পেছনে অজস্র ঠগবাজি থাকে, প্রতিটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দাঁড়িয়ে থাকে অনেক অসহায় মানুষের অর্থের উপরে।

চাকুরি করতে এসে খুব অস্থির লাগে। এই অনাচারে মন টিকেনা, তবু পেটের দায়ে আঁকড়ে ধরে থাকতে হয় প্রতিটি মিথ্যার মাঝেই নিজের জায়গাটুকু। এই নীতিবোধ কোত্থেকে তৈরি হয়েছিলো জানিনা। হয়ত বাবা-মায়ের জীবন দেখেই। পুরোনো সেই বোধগুলোর সাথে জীবনের ঘটনাগুলোকে প্রতিদিন প্রতিক্ষণ এক এক করে হিসেব করতে থাকি, খেয়ালে বা বেখেয়ালে, অজান্তে আপনা আপনিই।


চাকুরি শেষে ফেরার সময় আজ আমার একটা স্মৃতি মনে পড়লো। সেই স্মৃতিতে ছিলো এক ঘণ্টা ধরে ট্রেন লাইনের ওপর দিয়ে হেঁটে যাবার স্মৃতি। সাথে ছিলো দুই বন্ধু। রেলের লাইনে তিনটা সমান্তরাল লাইনের ওপর তিনজনের হেঁটে যাওয়া। দূরে খেয়াল রাখতে রাখতে আমরা সেদিন পণ করেছিলাম -- কে দ্রুত না পড়ে একটা পাতের উপরে দিয়ে দূরে হেঁটে যেতে পারে।

তখনো সাধারণ বোধ হারাইনি, মনে ছিলো খেয়াল রাখতে হবে ট্রেন আসার ব্যাপারটা। দুইটা ট্রেন সিগন্যালের মাঝামাঝি জায়গায় একপাশে সবুজ ক্ষেত আর আরেকপাশে ঘরবাড়ির এলাকায় সেদিন হেঁটেছিলাম। তিনজনের মধ্যে আমিই সবার আগে পড়ে গিয়েছিলাম। দ্রুত ছিলাম না।


স্মৃতি আজ মনে পড়ে গেলো। কারণ এই শহরে শ্রম বেচে ফেরার সময় তো অমনই লাগে। আমি তাল পাইনা। ক্রমাগত পড়ে যেতে নিই। কোনমতে সামলাই। ভালো লাগেনা। খাঁচার ভেতর অচিন পাখির মতন মনে হয়। পরিবার সংসার ছেড়ে যেতে পারব না, পারব না বাউল হতে, পারব না সন্নাসী হয়ে বটগাছের নিচে বসে গান গাইতে। আসলে ওই জীবনগুলোরও অর্থ নাই।

এই তাল সামলানোর অন্তহীন এক যুদ্ধ হলো জীবন। এর শেষ কেবল একটা বাগানে গেলেই হবে। তার আগে শুধুই ছুটে চলা। তবে, চোখটা বন্ধ করে যখন তাকে অনুভব করি খুব কাছে, হৃদয়ের গভীরে, কেবল তখনই শান্তি পাই। নয়ত বুঝি টিকে থাকত পারতাম না এই জনারণ্যে - মিথ্যে, প্রবঞ্চনা, ঠাট-বাট, অত্যাচার আর অন্যায়ের এই শহরে। পড়ে যেতে নিয়ে তাই সামলে উঠি মাঝে মাঝে কিছু সুন্দর অনুভবে...

No comments:

Post a Comment